‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সদস্যরা। সোমবার (২৬ মে) সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বাদামতলা এলাকা থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি। সাইট পরিদর্শনে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কাজ ছেড়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তারা অধ্যাদেশটিকে অবৈধ এবং কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন। এর আগে, গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়। সেই সঙ্গে খসড়াটি পর্যালোচনার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়—আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এবং গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তবে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের সংশোধনের উদ্যোগ হিসেবে প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় তারা আন্দোলনে নামেন। এই প্রতিবাদের মাঝেই গতকাল রোববার অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। আন্দোলনকারীরা এই অধ্যাদেশকে সংবিধানবিরোধী বলে দাবি করে দ্রুত তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাদের বক্তব্য, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে সাত থেকে আটটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়, যার ফলে শাস্তি কার্যকর করাটা প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর অধ্যাদেশটিকে ‘কালো আইন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এরপর সচিবালয়ের বাদামতলায় অবস্থান নেন কর্মচারীরা। পরে পরিষদের নেতারা উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দুপুর দেড়টার দিকে কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
অন্যদিকে, অধ্যাদেশ জারির পর আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মো. নজরুল ইসলাম জানান, তারা সোমবার (আজ) সকাল ১১টায় বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবেন। প্রশাসন বিশ্লেষক ও সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার কালবেলাকে বলেন, প্রশাসনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কিছু কঠোর বিধান থাকা প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ এবং প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরির প্রবণতা রোধে স্বল্প নোটিশে চাকরিচ্যুতির বিধান অযৌক্তিক নয়। তিনি আরও বলেন, যারা নিয়মভঙ্গ বা দুর্নীতির চিন্তা করছেন, এই সংশোধিত আইন তাদের কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে।