মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালত চারটি বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শিশির মনির। মঙ্গলবার (২৭ মে) রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। শিশির মনির বলেন, আদালত চারটি মূল বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালতের মতে, মামলায় উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণ অতীতের আপিল বিভাগ যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেই রায়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার ধারা পাল্টে দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল এক বড় ধরনের ভুল। আদালত বলেন, এই মামলায় বিচার নয়, বরং তা ছিল ‘বিচারের নামে অবিচার’। আদালতের ভাষায়, যথাযথভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা ছাড়াই এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর আগে, মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আজহারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।
রায় ঘোষণার সময় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, ঢাকা উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, মাসুদ সাঈদী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন ও সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারের আপিলের দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। এর আগে মঙ্গলবার (৬ মে) হয় প্রথম দিনের শুনানি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মোট ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের নয়টি অভিযোগ আনা হয় আজহারের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি, অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে (পঞ্চম অভিযোগ) তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড এবং নির্যাতনের অভিযোগে (ষষ্ঠ অভিযোগ) ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ (প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ) দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ষষ্ঠ অভিযোগের সাজা বহাল রাখে। তবে পঞ্চম অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছরের ১৯ জুলাই রিভিউ আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার সেই আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেন। এরপরই আজহারুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে আপিল করেন।