বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। তবে ২০২৫ সালের ২৯ মে তিনি হঠাৎ করেই ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর পদত্যাগের পরপরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন মাস্ককে ঘিরে বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সময় মাস্ক নিয়মিতভাবে কেটামিন, এক্সট্যাসি এবং সাইকেডেলিক মাশরুমের মতো মাদক সেবন করতেন।
মাদক গ্রহণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, তা তাঁর শারীরিক স্বাস্থ্য, বিশেষ করে মূত্রথলির জটিলতায় রূপ নেয়। সূত্র জানায়, মাস্ক প্রতিদিন কেটামিন গ্রহণ করতেন এবং প্রায় ২০ ধরনের ওষুধ নিয়ে ঘুরতেন। তাঁর সঙ্গে থাকা ওষুধের বাক্সে অ্যাডেরলের মতো শক্তিশালী উত্তেজক ওষুধও ছিল। একটি ছবিতে দেখা যায়, ওষুধের ওই বাক্সে স্পষ্টভাবে অ্যাডেরলের বড়ি রাখা আছে। তবে মাস্ক দাবি করেন, তিনি হতাশা দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি দুই সপ্তাহে একবার কেটামিন নেন। ২০২৩ সালের বসন্তের দিকে কেটামিন গ্রহণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়। সে সময় মাস্ক ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণার নেতৃত্ব দেন এবং প্রচারে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন। পাশাপাশি তিনি "ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)" নামের একটি বিশেষ প্রশাসনিক ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক নিয়মিত হোয়াইট হাউসে যাতায়াত করতেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বাজেট পরিকল্পনা ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর সংস্কারে তাঁর কার্যকর ভূমিকা ছিল। তবে হোয়াইট হাউস মাস্কের মাদক সেবনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি কিংবা তাঁকে ড্রাগ টেস্টে অংশ নিতে বলেছে কি না, সে সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি। উল্লেখযোগ্য যে, মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান সরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কর্মীদের জন্য মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মাস্ক আগেই ড্রাগ টেস্ট সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যেতেন।
প্রতিবেদনটি মাস্কের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও প্রশ্ন তোলে। একাধিক নারী সঙ্গী এবং সন্তানদের নিয়ে আইনি জটিলতায় জড়িয়েছেন তিনি। প্রাক্তন সঙ্গিনী গায়িকা গ্রাইমস তাদের সন্তানের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হন।এছাড়া, লেখক অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ার দাবি করেন, মাস্কের সঙ্গে তাঁর গোপন সম্পর্কে একটি সন্তান জন্ম নিয়েছে এবং মাস্ক চাননি এই বিষয়টি জনসমক্ষে আসুক। পরে তিনি অ্যাশলিকে থামাতে আদালতে গ্যাগ অর্ডার চেয়ে আবেদন করেন। ইলন মাস্কের বর্তমান আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিনের কিছু বন্ধুরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিউরোসায়েন্টিস্ট ও তাঁর সাবেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফিলিপ লো বলেন, “ইলন এখন এমন কিছু আচরণ করছে, যা তার পুরনো সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।”
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস