লন্ডনে তুরস্কের কনস্যুলেটের সামনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ধর্মীয় বিদ্বেষ ও জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। ৫০ বছর বয়সী হামিত কোসকুনকে ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২৪০ পাউন্ড (প্রায় ৩২৫ মার্কিন ডলার) জরিমানা করেছেন, যা বিবিসি জানিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন কোসকুন লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তুরস্কের কনস্যুলেটের সামনে কোরআন শরিফে আগুন লাগিয়ে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার করেন এবং অশালীন ভাষা ব্যবহার করে জনসম্মুখে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন।
বিচারক জন ম্যাকগারভা রায়ে উল্লেখ করেন, “ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানো অনেকের কাছে আপত্তিকর হতে পারে, তবে তা সরাসরি জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ বলে গণ্য নাও হতে পারে। কিন্তু হামিত কোসকুনের ঘটনাস্থল, সময় এবং ভাষা নির্বাচনের ধরণ জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মকে লক্ষ করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহারের কারণে বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়েছে।”
কোসকুন নিজের বিরুদ্ধে আনা ধর্মীয় বিদ্বেষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার এই কাজ তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের উদ্দেশ্য ছিল, ইসলাম ধর্ম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়। তার আইনজীবী দাবি করেন, এই মামলার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে ২০০৮ সালে বাতিল হওয়া ব্লাসফেমি (ধর্ম অবমাননা) আইন কার্যত পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
আদালতের নথিতে হামিত কোসকুনের পারিবারিক পটভূমিও উল্লেখ রয়েছে। জানা গেছে, তার বাবা কুর্দি ও মা আর্মেনীয়, এবং বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলে বসবাস করছেন।
এই রায়ের ফলে যুক্তরাজ্যে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন, ধর্মীয় অনুভূতির ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করা যুক্তরাজ্যের মত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রায়ের মাধ্যমে ব্লাসফেমি আইনের মত বিতর্কিত ধারা আইনি বাস্তবতায় ফিরে আসতে পারে। অন্যদিকে, অনেকেই আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ জনসম্মুখে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক আচরণ সমাজে উত্তেজনা ও সহিংসতা বাড়াতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।