হবিগঞ্জ-লাখাই-নাসিরনগর-সড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কটি হবিগঞ্জ জেলার পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশ সরু হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এটি প্রশস্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।
সরকার তাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে সড়কটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে এবং কাজ শুরুর অপেক্ষায় ছিল প্রকল্পটি। তবে সম্প্রতি অজানা কারণে নাসিরনগর-সড়াইল অংশে কাজ শুরুর সুপারিশ করা হলেও হবিগঞ্জ-লাখাই অংশ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা। এরইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানানো হয়েছে।
অ্যাডভোকেট শামছুল ইসলাম বলেন, বারবার হবিগঞ্জবাসীকে অবজ্ঞা করে প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে, যা একটি অদৃশ্য ষড়যন্ত্র বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই সড়কের উন্নয়ন হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেট বিভাগের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার কমে আসবে। যাতায়াতে খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে, শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে, ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। তাই দ্রুত কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি উপেক্ষিত হলে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবেন।
স্থানীয় প্রবীণ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার আব্দাল বলেন, টেন্ডার হয়ে যাওয়া একটি প্রকল্প কীভাবে বাতিল হতে পারে, তা বোধগম্য নয়। এই সড়ক দিয়ে তিন জেলার মানুষ চলাচল করে এবং এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ অবস্থায় প্রকল্প বাতিলের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের মানুষের সঙ্গে বারবার ষড়যন্ত্র করা হয়, যা আর সহ্য করা হবে না। যদি এই সড়ক প্রকল্প বাতিল করা হয়, তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করার মত কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু সাঈদ মো. নাজমুল হুদা বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতি অনেক দূর এগিয়েছে, এমনকি টেন্ডারও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিদর্শক দল এসে জানায়, এই সড়কে যানবাহনের চাপ কম, তাই প্রকল্পটি প্রয়োজনীয় নয় বলে মত দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা কেবল সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নের কাজ করি, প্রকল্প চালু রাখা বা বাতিলের সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই।
প্রকল্পের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রায় ৬৬১.৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হবিগঞ্জ-লাখাই-নাসিরনগর-সড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কটি উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২৬.৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে প্রশস্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ভূমি অধিগ্রহণ, সিসি ব্লক নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক কাঠামোরও প্রস্তাব রাখা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ব্যতীত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৪৬২.৭৫ কোটি টাকা, যা প্রতি কিলোমিটারে ১৭.৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হবে – একে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক যানবাহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। বাস, ট্রাকসহ বড় গাড়িগুলো হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল, সুনামগঞ্জ ও সিলেট হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। কিন্তু রাস্তাটি সরু হওয়ায় বড় গাড়িগুলোর চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে এবং প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। অনেক প্রাণহানিও ঘটেছে। তাই এলাকাবাসী জোর দাবি জানাচ্ছেন, এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্প থেকে যেন বাদ না পড়ে এবং দ্রুত কাজ শুরু করা হয়।
উল্লেখযোগ্য যে, চার জেলার আর্থসামাজিক, কৃষি ও শিল্প খাতের জন্য এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উন্নয়ন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সঙ্গে একটি বিকল্প ও কার্যকর সংযোগ গড়ে তুলবে, যা আঞ্চলিক অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করবে। এতে পণ্য পরিবহন সহজ হবে, জনগণের যাতায়াত ব্যয় ও সময় কমবে এবং সড়ক নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে।