বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনতা ফিরে পেলেও এখনও পুরোপুরি মুক্ত হয়নি ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রভাব থেকে—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (১৬ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান লেখেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। ওই দিন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী বহুদলীয় রাজনীতি বিলুপ্ত করে, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা 'বাকশাল' চালু করে গোটা জাতিকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র চারটি অনুগত পত্রিকা রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার ফলে, অগণিত সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবিকা ও সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে। অথচ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় ছিল জাতীয় ভূখণ্ডের স্বাধীনতার পাশাপাশি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা।
তিনি আরও বলেন, চিরায়ত গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো নাগরিক স্বাধীনতা, যার অন্যতম শর্ত—বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ভিন্নমতের প্রকাশ নিশ্চিত করে, রাষ্ট্র ও সমাজকে করে জবাবদিহির আওতায়। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই শাসকগোষ্ঠী এ চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করে দেয়। পরবর্তীকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একদলীয় শাসনের অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করেন।
তারেক রহমান আরও বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মানেই বিবেক, চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিকে বন্দি করা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও একদলীয় শাসনব্যবস্থার নব সংস্করণ তৈরি করেন। তাঁদের আমলে সাংবাদিকদের ওপর নানামুখী দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, জারি করা হয়েছে একের পর এক কালাকানুন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো ‘ড্রাকোনিয়ান আইন’ পাস করে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের কঠোর কৌশল গ্রহণ করা হয়। যার ফলে সত্য প্রকাশের ঝুঁকি ছিল চরম নির্যাতনের আশঙ্কা। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিছুটা শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেলেও আজও তারা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত নয় ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রভাব থেকে। তারেক রহমান আরও লেখেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটি মৌলিক উপাদান। গণতন্ত্রকে নিরাপদ ও টেকসই করতে হলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।