কাঠমান্ডু, নেপাল: মাতৃভাষায় সাংবাদিকতা রক্ষায় এবং এর বিস্তার ঘটাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘মাতৃভাষায় সাংবাদিকতা’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে ঘোষিত ‘কাঠমান্ডু ডিক্লারেশন’-এ এই আহ্বান জানানো হয়। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ছিল ন্যাশনাল ফোরাম অব নিউয়ার জার্নালিস্টস (NFNJ)। সহযোগী হিসেবে ছিল সার্ক জার্নালিস্টস ফোরাম (SJF) ও ফেডারেশন অব নেপাল ইন্ডিজেনাস জার্নালিস্টস (FONIJ)। সার্ক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা সাংবাদিক, গবেষক ও সংগঠকেরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্থানীয় ও আদিবাসী ভাষাভিত্তিক গণমাধ্যম যেন তাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও বিকাশের সুযোগ পায়, সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি নীতিগত অঙ্গীকার জরুরি। বিশেষভাবে গোষ্ঠীগত ও সম্প্রদায়ভিত্তিক ভাষায় সাংবাদিকতাকে সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে মাতৃভাষার সাংবাদিকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও ফেলোশিপ আয়োজনের প্রস্তাব রাখা হয়। এছাড়া জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতি এই খাতে অর্থায়ন, কারিগরি সহায়তা ও দক্ষতা উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নেপালের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার দেবরাজ ঘিমিরে এবং সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যপুর থিমি মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র সুরেন্দ্র শ্রেষ্ঠ। সমাপনী বক্তব্যে মেয়র শ্রেষ্ঠ বলেন,
“এই সম্মেলন দক্ষিণ এশিয়ায় মাতৃভাষাভিত্তিক সাংবাদিকতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়ক হবে।” সার্ক জার্নালিস্টস ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজু লামা সকল অংশীজনকে ঘোষণাপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগে সার্কভুক্ত দেশগুলোর অংশগ্রহণ আরও জোরদার করারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—ফনিজ সভাপতি লাকি চৌধুরী, এসজেএফ এর মহাসচিব মো. আবদুর রহমান (বাংলাদেশ), বিহার চ্যাপ্টারের সভাপতি ড. শশী ভূষণ কুমার, সম্মেলন সমন্বয়ক সুনীল মহার্জন এবং এনএফএনজের মহাসচিব কেকে মানান্ধর। তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের বক্তব্যে মাতৃভাষার মাধ্যমে সাংবাদিকতা চর্চার প্রয়োজনীয়তা ও তা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঘোষণাপত্রে জানানো হয়, সম্মেলনে গৃহীত সুপারিশ ও প্রস্তাবনা সমূহ সরকার প্রধানদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমও চলমান থাকবে।