মাগুরার মহম্মদপুরের নহাটা ইউনিয়নে মঙ্গলবার পৃথক দুই সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত
মাত্র এক হাজার টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নারীসহ গুরুতর আহত ৭ জন, নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি ৩ জনসংঘর্ষের সময়। ৩৫টি বাড়িঘর ও দুটি ট্রাক্টর ভাঙচুর ও লুটপাট। মশাখালী গ্রামে পূর্ব বিরোধের জেরে আরেকটি সংঘর্ষে আহত আরও ১০ জন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একজনকে আটক করে, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন।
বিস্তারিত প্রতিবেদন:
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের বেজড়া ও মশাখালী গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও ব্যক্তিগত বিরোধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১৮ জুন) পৃথকভাবে ভয়াবহ দুই সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারীসহ ৭ জন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩৫টিরও বেশি বাড়িঘর ও দুটি ট্রাক্টর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেজড়া গ্রামের করিম মোল্যা একই গ্রামের মশিউরের কাছে মাত্র এক হাজার টাকা পাওনা ছিলেন। সোমবার বিকেলে নহাটা বাজারে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হলেও সন্ধ্যায় করিমের সমর্থকরা মশিউরের ভাই শফিকুলকে চায়ের দোকানে একা পেয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরদিন, মঙ্গলবার সকালেই করিম মোল্যার পক্ষ নিয়ে যুবদল নেতা পাভেল, ইমদাদ ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলজার ও দেলজারের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয় বিএনপি নেতা ফারুক মেম্বার ও মশিউরের সমর্থকদের উপর। নারীসহ সাতজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। আহতদের মধ্যে রাজিয়া বেগম (৭৫), জুই (১৬), ও মেরি (৪০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই সহিংসতায় ফারুক মেম্বারের বাড়িসহ উভয় পক্ষের মোট ৩৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। দুটি ট্রাক্টরও ভাঙচুর করা হয়।
পুনরায় উত্তেজনা: মশাখালীতে সংঘর্ষ
একই দিনে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ইউনিয়নের মশাখালী গ্রামে দীর্ঘদিনের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আলমগীর ও তৌহিদ মেম্বার গ্রুপের মধ্যে আরেকটি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হন। গুরুতর আহত রাব্বি মোল্যা (২৬) ও সুফিয়ান মোল্যা (৩৫) বর্তমানে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। অন্যান্য আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে গেছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ:
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহমান জানান, “সংঘর্ষের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।”
একটি দিনের সহিংসতা, একটি গ্রামের বেদনা:
একদিনে দুটি সংঘর্ষ, আহত বৃদ্ধা রাজিয়া বেগম, কিশোরী জুই বা আহত শফিকুলের চোখে শুধুই আতঙ্ক। ভাঙা দরজা, আগুনে পোড়া চালা, এবং কাঁদতে থাকা নারী-শিশুর মুখ—সব মিলিয়ে যেন গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনীতি ও ব্যক্তিগত শত্রুতা—দুটোই এখন গ্রামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বড় বাধা। তারা দ্রুত বিচার ও স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।