ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন সম্পন্ন করে ইসরায়েলের হার্মেস-৯০০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি জানিয়েছে, ইরানের মধ্যাঞ্চলের আকাশসীমায় ওই অত্যাধুনিক ড্রোনটি শনাক্ত করা হলে তা নিখুঁতভাবে ধ্বংস করা হয়। হার্মেস-৯০০ ড্রোনটি মূলত নজরদারি ও আক্রমণ উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় ধরণের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রোববার (২২ জুন) রাতে ইসরায়েল সরকার ঘোষণা দেয়, তারা ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করে, তাদের লক্ষ্য ছিল তেহরানে একটি গ্রাউন্ড টু এয়ার মিসাইল লঞ্চার। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তাদের বিমান হামলার পর বিমানগুলি নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।
এর কিছু সময় পরই ইরান জানায়, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি ইসরায়েলি ড্রোন সনাক্ত করে তা ভূপাতিত করেছে। ইরানের পক্ষ থেকে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর জানা যায় যে, ধ্বংস হওয়া ড্রোনটি ছিল হার্মেস-৯০০ মডেলের, যা উচ্চ প্রযুক্তির নজরদারি ও আক্রমণ করার সক্ষমতা সম্পন্ন। ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইসরায়েল এই ঘটনার বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা পাসার চেষ্টা করছে।
গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা এবং সামরিক সংঘর্ষ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় — ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে — বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস জানায়, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করেই এই অভিযান পরিচালনা করেছে। এছাড়াও, ইসরায়েলি বিমান ও মিসাইল ইউনিট স্বতন্ত্রভাবে ইরানের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানছে বলে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বাংকার লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী বাংকার বাস্টার নামক এক ধরণের বিশেষ শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করেছে, যা বিস্তীর্ণ ধ্বংস সাধন করতে সক্ষম। অন্যদিকে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। দেশটির পরমাণু সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম অনেকটাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পরিদর্শক সংস্থা জানায়, হামলার পরপরই ওই পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর আশপাশে বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কি না, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তাদের পর্যবেক্ষণে কোনও বিপজ্জনক বিকিরণ বা রেডিওঅ্যাকটিভ লিকের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করেছেন যে, তীব্র হামলার পরও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা মোটামুটি অক্ষুণ্ণ রয়েছে। মোটকথা, এই ঘটনায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা এবং সামরিক টানাপোড়েন আরো প্রকট হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতির দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে দ্বিপক্ষীয় সংঘর্ষকে সামাল দিতে পরামর্শ ও শান্তি প্রক্রিয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা এবং আক্রমণের পাল্টা পাল্টি ঘটনা চলছে, তা বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।