মার্কিন বিমান হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)-র একটি প্রাথমিক ফাঁস হওয়া মূল্যায়নে বলা হয়েছে, এ হামলার ফলে ইরানের কর্মসূচির অগ্রগতি মাত্র কয়েক মাস পিছিয়েছে। সিআইএ’র তথ্য: গুরুতর ক্ষতি সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ বুধবার জানিয়েছেন, প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে আরও জানান, সিআইএ’র বিশ্লেষণ ‘অবৈধভাবে প্রকাশিত কিছু তথাকথিত প্রতিবেদনের’ বিপরীত। র্যাটক্লিফ বলেন, একটি দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য সূত্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত নতুন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইরানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং সেগুলো পুনরায় নির্মাণে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও সিআইএর এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
ডিআইএ’র দৃষ্টিভঙ্গি: সীমিত ক্ষয়ক্ষতি। অন্যদিকে, ডিআইএ’র একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন মঙ্গলবার ফাঁস হয়, যাতে বলা হয়েছে—মার্কিন বোমাবর্ষণের ফলে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হলেও তা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই তথ্য ফাঁসের ঘটনাকে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমগুলোর সমালোচনা করেছে। ডিআইএ জানিয়েছে, এই মূল্যায়ন ‘নিম্ন আস্থার’ উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, কারণ এটি হামলার মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর রবিবার রাতে সংগৃহীত তথ্যের ওপর নির্ভর করেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির আস্থাহীনতার কারণ—প্রমাণাদি পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে গেছে এবং অনেক স্থান একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও ইসরায়েলের বক্তব্য। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, যদি ইরান যথেষ্ট পরিমাণ উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ রক্ষা করতে সক্ষম হয়, তাহলে লক্ষ্যবস্তু হওয়া তিনটি স্থাপনা ধ্বংস হলেও তারা দ্রুত তাদের কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে পারবে। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বুধবার ভিয়েনায় জানান, ইসরায়েলের ১২ দিনের বোমাবর্ষণ এবং মার্কিন হামলা সত্ত্বেও ইরানের কাছে এখনও উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ থাকতে পারে। তার মতে, ইসরায়েলের হামলার পরপরই তেহরান হয়তো কিছু ইউরেনিয়াম স্থানান্তর করে থাকতে পারে।
মঙ্গলবার এনবিসি নিউজ জানায়, প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্যে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ইরানের সমস্ত উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধ্বংস বা নিরীক্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ইরানের উন্নত সেন্ট্রিফিউজের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি পারমাণবিক শক্তি কমিশনের দাবি, মার্কিন হামলায় ফোরদো ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এখন অচল হয়ে গেছে। কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, মার্কিন ও ইসরায়েলি যৌথ হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সামরিক অংশগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা বহু বছর পিছিয়ে গেছে।