হরিজনদের ১৪ দফা দাবি রাষ্ট্রীয় সংস্কারে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান। সংসদে উত্থাপিত বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২ পুনঃসংশোধনের দাবি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও হরিজন জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও প্রান্তিক অবস্থান থেকে মুক্তি পেতে ১৪ দফা দাবিকে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ‘পরিত্রাণ’ ও ‘বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ’। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়। সম্মেলনে বলা হয়, হরিজন জনগোষ্ঠী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশের শহর ও নগরগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পালন করে আসছে। অথচ এই জনগোষ্ঠী এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, নিরাপদ আবাসন, সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ ও পেশাগত মর্যাদার বাইরে রয়ে গেছে। বক্তারা বলেন, পরিচ্ছন্নতা ছাড়া আধুনিক নগরজীবন কল্পনাই করা যায় না, অথচ পরিচ্ছন্নতা খাতের শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার।
হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নগরের প্রতিটি অলিগলি পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু আমাদের জন্য নেই নিরাপদ বসবাস, নেই চাকরি স্থায়ীত্ব, নেই বেতন-বোনাস বা পেনশনের নিশ্চয়তা। আমাদের সন্তানরাও বেড়ে উঠছে বৈষম্য ও অবজ্ঞার পরিবেশে।” তিনি জানান, প্রায় ১৫ লাখ হরিজন জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে বসবাস করলেও তারা এখনো সমাজ ও রাষ্ট্রের মূলস্রোতে জায়গা পায়নি। তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্নতা খাতে যারা কাজ করছেন, তাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যঝুঁকি, সামাজিক নিগ্রহ ও পেশাগত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাসস্থান নিয়ে রয়েছে স্থায়ী অনিশ্চয়তা। সরকার যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা নিচ্ছে, তার কোথাও হরিজনদের কণ্ঠ নেই। নেই প্রতিনিধি হিসেবেও কোনো অংশগ্রহণ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জাতীয় সংসদে উত্থাপিত 'বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের একটি আইন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও এতে হরিজনদের বাস্তবতা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। বিলটির কিছু ধারা ও ভাষা এমন যে, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই বিলটি নতুন করে পর্যালোচনা ও সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট উৎফল বিশ্বাস এবং হরিজন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রদীপ হেল। বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সরকারকে এ জনগোষ্ঠীর প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। উন্নয়নের নামে কাউকে উপেক্ষা করে টেকসই রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। তারা জানান, যে ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, তা শুধু হরিজনদের অধিকারের প্রশ্ন নয়, এটি একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখাও। এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। বক্তারা সরকার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই দাবির প্রতি সংহতি জানানোর আহ্বান জানান।