রাশিয়া বর্তমানে সব ধরনের অস্ত্রের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সামরিক শিল্পখাত তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। গত বুধবার (২ জুলাই) মস্কোয় অনুষ্ঠিত রাশিয়ার সংসদীয় অধিবেশনে এই তথ্য তুলে ধরেন দেশটির শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আন্তন আলিখানভ। তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প খাত এখন বহুমুখী প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। অস্ত্র উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির সংযুক্তি এবং আধুনিকায়নের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় গতি এসেছে। এর ফলে দেশে তৈরি সব ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা সম্মিলিতভাবে সব ধরনের অস্ত্রের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছি। রাষ্ট্রীয় অস্ত্র কর্মসূচির অধীনে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য সামরিক শিল্পখাত সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমরা আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।" আলিখানভ আরও উল্লেখ করেন যে, সামরিক শিল্পখাত শুধু দেশের প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে নয়, বরং বৈদেশিক রপ্তানির বিষয়েও জোর দিচ্ছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারে রাশিয়ার অবস্থান ইতিমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত, এবং সেই অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে, স্টকহোমভিত্তিক আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রপ্তানির দিক থেকে রাশিয়া তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। এই তিন দেশই বিশ্বের বৃহৎ অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই উৎপাদন বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সামরিক সক্ষমতা জোরদার করার প্রয়াস। একই সঙ্গে, বিশ্ব অস্ত্র বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা এবং নতুন নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। সামরিক খাতে রাশিয়ার এই উদ্যম শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের প্রস্তুতিই নয়, বরং বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।