সুপারইন্টেলিজেন্সের লক্ষ্যে মেটার দৌড়, এআই প্রতিযোগিতায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা।বিশ্বব্যাপী যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই বড়সড় ঘোষণা দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে মেটা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, সুপারইন্টেলিজেন্স অর্জনের লক্ষ্যে তারা গঠন করেছে একটি নতুন উচ্চাভিলাষী ইউনিট—‘মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব’ (Meta Superintelligence Lab বা MSL)। এআই গবেষণার এই নতুন উদ্যোগকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটি নতুন ধাপের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মেটা জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের এআই বিভাগকে পুনর্গঠন করেছে এবং এতে যুক্ত হয়েছেন ওপেনএআই, গুগল ডিপমাইন্ড ও অ্যানথ্রপিক থেকে আগত শীর্ষ গবেষক ও প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে রয়েছেন ডিপমাইন্ডের প্রাক্তন গবেষক জ্যাক রেওপেইসান, ওপেনএআই-এর শু চাও বিউ, জিয়াহুই ইউ ও হং ইউ রেন এবং অ্যানথ্রপিকের জোয়েল পবার, যিনি আগে থেকেই মেটার সঙ্গে এক দশকের বেশি সময় যুক্ত ছিলেন।
নতুন ইউনিটের নেতৃত্বে থাকবেন স্কেল এআই-এর সাবেক সিইও আলেকজান্ডার ওয়াং। তার সঙ্গে এআই পণ্য উন্নয়ন ও ফলিত গবেষণার দিকটি দেখবেন গিটহাবের সাবেক সিইও ন্যাট ফ্রিডম্যান। বিশ্লেষকদের মতে, এ দুজনের অভিজ্ঞতা মেটার এআই অভিযানে নতুন গতি আনবে। জাকারবার্গ এক অভ্যন্তরীণ বার্তায় বলেন, "এআই-এর অগ্রগতি এখন এত দ্রুত যে সুপারইন্টেলিজেন্স আর কল্পনার বিষয় নয়, এটি বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে। আমি বিশ্বাস করি, এটি মানবসভ্যতার জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে—আর সেই যাত্রায় মেটাকে নেতৃত্বে রাখতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।" এই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগেও। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে ‘শত শত বিলিয়ন ডলার’ বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে মেটা। চলতি মাসেই তারা স্কেল এআই-তে ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি, কণ্ঠস্বর নকলের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা স্টার্টআপ প্লে-এআই অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। পারফ্লেক্সিটি এআই ও রানওয়ে এআই-এর সঙ্গেও চলছে আলোচনা।
‘মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব’-এর অধীনে এক ছাতার নিচে আনা হচ্ছে মেটার লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল দল, মৌলিক গবেষণা ইউনিট FAIR এবং এআই অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট টিম। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে একটি নতুন গবেষণাগার, যেখানে ভবিষ্যতের জেনারেটিভ এআই মডেল নিয়ে কাজ হবে। এআই খাতে প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করতে জাকারবার্গ নিচ্ছেন ভিন্নধর্মী পদক্ষেপ। ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টো ও লেক তাহোতে নিজের বাসভবনে সম্ভাব্য নিয়োগপ্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করছেন তিনি। অনেককে দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের শেয়ার প্যাকেজ—যা মেটার আগ্রাসী মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। এই ঘোষণা আসার পরদিনই মেটার শেয়ারমূল্য ছুঁয়েছে ৪৭.৯০ ডলার, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকদের মতে, সুপারইন্টেলিজেন্স নিয়ে মেটার এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা প্রযুক্তি বিশ্বে এক নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে।
যেখানে ওপেনএআই, গুগল ও অ্যানথ্রপিক নতুন প্রজন্মের মডেল তৈরিতে ব্যস্ত, সেখানে মেটা সরাসরি সুপারইন্টেলিজেন্স অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, প্রতিভা ও অর্থ—এই তিন দিক থেকেই তারা এগিয়ে থাকার কৌশল নিয়েছে। সব মিলিয়ে ‘মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব’ শুধু একটি গবেষণা ইউনিট নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনেতৃত্বের দিকনির্দেশনা। এখন দেখার বিষয়, মেটার এই উচ্চাভিলাষ কতটা বাস্তবায়িত হয়। তবে এটা নিশ্চিত, এআই যুদ্ধ এখন আরও তীব্র, গভীর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।