ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম। প্রথম সিনেমা ‘হারানো দিন’-এর মাধ্যমে রীতিমতো সাড়া ফেলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সুপারহিট ছবির গান ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা...’ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ওই সিনেমাতেই পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান তার নাম রাখেন ‘শবনম’, যার অর্থ—ফুলের ওপর শিশির বিন্দু। ষাটের দশক থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মিলিয়ে ১৮৫টি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। পাকিস্তানে দীর্ঘদিন কাজ করায় অনেকে ভেবেছিলেন তিনি সেখানকার শিল্পী। তবে তিনি ঢাকায় ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন, আসল নাম ঝর্ণা বসাক। তিনি ছিলেন এমন একমাত্র অভিনেত্রী যিনি নিগার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন টানা ১৩ বার।
১৯৯৯ সালে ‘আম্মাজান’ সিনেমায় শেষবার অভিনয় করেন শবনম, যা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। তিনি বলেন, “আমার অভিনীত প্রথম ও শেষ সিনেমাই ছিল সেরা ও হিট।” এরপর আর ক্যামেরার সামনে আসেননি। কারণ হিসেবে জানান, “যথাযথ চরিত্র পাইনি, তাই দূরে সরেছি।” তিনি বলেন, “সৃষ্টিকর্তা যে আসনে বসিয়েছেন, সেখানে সাধারণ চরিত্রে কাজ করতে পারি না।” তবুও গত ২৫ বছর ধরে তিনি অপেক্ষায় আছেন ভালো গল্প ও চরিত্রের। অভিনয়ের আগ্রহ এখনো রয়ে গেছে তার মধ্যে। শবনম ১৯৬৪ সালে সংগীত পরিচালক রবীণ ঘোষকে বিয়ে করেন। ২০১৬ সালে রবীণ ঘোষের মৃত্যু হয়। তাদের একমাত্র সন্তান রনি ঘোষ। বর্তমানে ঢাকায় নিজ বাসায় থাকেন। সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে, সিনেমা দেখে। নিয়মিত বাজারে যান, যেখানে মানুষ এখনো তাকে 'আম্মাজান' বলে সম্বোধন করে।
নিজ দেশ থেকে বড় কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আফসোস নয়, দুঃখ হয়। নিজের দেশে কিছু করতে পারলাম না।” তবে জীবনের প্রতি তার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, “অনেক পেয়েছি, চাওয়ার কিছু নেই। শুধু সুস্থ থাকি-এই কামনা করি।”