বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সমবায় অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছে লুটপাটের নানাবিধ দৃষ্টান্ত। তদন্ত প্রতিবেদনে ধারাবাহিক তছরুপের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচিত ও অনির্বাচিত উভয় পরিচালকরাই সমানভাবে সমিতির অর্থ আত্মসাতে যুক্ত ছিলেন। প্রতি কমিটি পূর্ববর্তী কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব গ্রহণ করেনি। ৪৮.৫ কাঠা জমি সাবেক নেতারা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিদিন ক্যান্টিনে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হলেও সমিতি লাভবান হয় না; বরং রয়েছে ২৯ লাখ টাকার গ্যাস বিল ও পাইকারি দোকানে কয়েক লাখ টাকার বাকি। অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত সদস্যদের নাম ব্যবহার করে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ২৬ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৫০ বছরে কোনো নিয়োগবিধি তৈরি না হওয়ায় ৩৩ জন কর্মচারীর বেতন ও বোনাস বকেয়া পড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার সমবায় ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার সমবায় কর্মকর্তার যৌথ তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসে। কমিটিগুলোর ধারাবাহিক গাফিলতিকে এসব অনিয়মের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুরোনো কমিটিরা দায় এড়াতে পারে না এবং ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ নির্বাচনে গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তদন্ত কমিটি। আইনসিদ্ধ না হওয়া ভোটার তালিকার ভিত্তিতে হওয়ায় ওই কমিটি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। বার্ষিক অডিট না করাকে গুরুতর অনিয়ম হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং বিধিবহির্ভূতভাবে সদস্য করা দুই হাজার ৩১ জনের সদস্যপদ বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, আয়ের ঘাটতির কারণে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে মাসে ২২ লাখ টাকার বিক্রির পরও কেন লাভ হয় না, তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত সদস্যদের শেয়ার বিক্রির টাকার বিষয়েও তিনি নিজের দায় অস্বীকার করেছেন। নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে, ১৯৫৯ সালে গঠিত সমিতির সদস্য সংখ্যা এখন ১৭ হাজারের বেশি। ক্যান্টিন, দোকান, বেকারি, স্টেশনারি ও অন্যান্য স্টলের মাধ্যমে বিপুল আয় হলেও লাভ হয় না। অথচ বিদ্যুৎ-পানি বিল ছাড়াই ক্যান্টিন পরিচালিত হয়; শুধু গ্যাস বিল দিতে হয়। গাজীপুরে কেনা ৪৮.৫ কাঠা জমি সাবেক নেতারা নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন এবং কেউ ঘরবাড়ি তৈরি করে, কেউ তা বিক্রি করে ফেলেছেন। প্রায় ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করছেন তারা। দলিলপত্র নেই বললেই চলে। কেউ এসব নিয়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত করেননি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিসাব হস্তান্তরের কোনো রেওয়াজ নেই। সদস্য তালিকা হালনাগাদ করা হয় না। বিধিবহির্ভূতভাবে শেয়ার ও ভর্তি ফি ছাড়া সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ সভার আয়োজন, বাজেট অনুমোদন ও অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়মিত লঙ্ঘন করা হয়েছে। বর্তমান কমিটিও ব্যয় নির্বাহ করেছে সাধারণ সভার অনুমোদন ছাড়াই। তাদের কাছে এসব ব্যয়ের অর্থ ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সমিতির দীর্ঘদিনের ম্যানেজার রুহুল আমিন জানান, কেউ প্রকৃতপক্ষে কল্যাণে কাজ করেনি; বরং প্রতিদিনের আয় আত্মসাৎ করা হয়েছে। সর্বশেষ গঠিত কমিটিই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সমিতির শেয়ার বিক্রির আয়ে ২৬ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ১০০ টাকা ফান্ডে জমা রেখে বাকি টাকা পরিচালকরা জনপ্রতি ১.৫ লাখ করে ভাগ করে নিয়েছেন।