পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরকে পাওয়া গেল নিথর দেহে - করাচির ফ্ল্যাটে মিলল ১৫-২০ দিন আগের মরদেহ। পাকিস্তানের শোবিজ অঙ্গনে শোকের ছায়া। বিখ্যাত মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে করাচির একটি ফ্ল্যাট থেকে। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার (৮ জুলাই) করাচির ডিফেন্স ফেজ-৬ এর ইত্তেহাদ কমার্শিয়াল এলাকার একটি আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাট থেকে তার পচনধরা মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, ফ্ল্যাটটি থেকে দীর্ঘদিন কোনো সাড়া না পাওয়ায় এবং ভাড়া বকেয়া থাকায় আদালতের নির্দেশে পুলিশ ফ্ল্যাটটি খালি করার উদ্যোগ নেয়। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে একজন আদালত নিযুক্ত বেলিফ পুলিশসহ ফ্ল্যাটে উপস্থিত হন। তখন ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা হয়। সেখানে মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় অভিনেত্রী হুমাইরার মরদেহ দেখতে পান তারা। প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই মারা গেছেন। তার দেহে পচন ধরেছে এবং ঘরের বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকার কারণে দুর্গন্ধ বাইরের কেউ টের পায়নি। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে নমুনা ও ফরেনসিক আলামত সংগ্রহ করেছে তদন্তকারী দল।
পুলিশ সূত্র জানায়, মৃত হুমাইরা আসগর বিগত সাত বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে একা বসবাস করছিলেন। তার কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা পরিবারের কেউ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন না বলেই জানা গেছে। এছাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল খুবই সীমিত। এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, তিনি খুব একটা বাইরে বের হতেন না এবং কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। তার নিজের কোনো গাড়িও ছিল না। ফ্ল্যাটটির মালিক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া পরিশোধ না করায় হুমাইরার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। আদালত তার উচ্ছেদের নির্দেশ দিলে সেই আদেশ কার্যকর করতে গিয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।এ বিষয়ে পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সৈয়দ গণমাধ্যমকে জানান, হুমাইরার দেহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং সেটি ইতোমধ্যে পচনধরা অবস্থায় এসেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, এটি আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা না কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের আগে কোনও অনুমানমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এদিকে হুমাইরার মৃত্যুতে শোবিজ অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। অনেক সহকর্মী, ভক্ত এবং পরিচিতজন তার মৃত্যুতে বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, হুমাইরা আসগর ‘তামাশা ঘর’ নামের একটি রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। এরপর ‘জালাইবি’ সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। মডেলিং ও অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও নিয়মিত উপস্থিত হতেন। দর্শকদের কাছে এক সময় খুবই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে তার ব্যক্তিজীবন ছিল অনেকটাই নিভৃত ও রহস্যময়। গ্ল্যামার জগতে জনপ্রিয়তা অর্জনের পরও তিনি একাকী জীবনযাপন করতেন। এ একাকীত্বই কি তার মৃত্যুর পেছনে কোনো ভূমিকা রেখেছে-সেটি এখন তদন্তসাপেক্ষ। হুমাইরার মৃত্যু একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিল পাকিস্তানের বিনোদন জগতে: জনপ্রিয়তা, অর্থ ও খ্যাতির আড়ালেও কেউ একজন হয়তো নিঃসঙ্গ, হয়তো বিপন্ন-কিন্তু সেটা বোঝার সুযোগ হয় না, যতক্ষণ না দরজা ভেঙে না দেখা হয় সত্যিকারের ট্র্যাজেডি।