জুলাই মাসের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট ‘বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন’ জানায়, তারা একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের অডিও যাচাই করেছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, “যেখানে যেখানে ওদের (বিক্ষোভকারী) পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে।” বুধবার (৯ জুলাই) বিবিসি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ফাঁস হওয়া ওই অডিও অনুযায়ী, শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন। তিনি বলেন, বাহিনীর সদস্যরা যেখানে আন্দোলনকারীদের খুঁজে পাবে, সেখানে গুলি চালাতে পারবে। সরকারি এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনের এই অডিওকে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে শেখ হাসিনাকে আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে শোনা গেছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই গণভবন থেকে ওই ফোনালাপটি করা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে এটি ফাঁস হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করে নিশ্চিত করেছে, এই ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ে শোনা কণ্ঠস্বর শেখ হাসিনার কণ্ঠের সঙ্গে মিলে যায়। বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি স্বাধীন ফরেনসিক বিশ্লেষক দল ‘ইয়ারশট’ আলাদাভাবে ওই অডিও পরীক্ষা করে তার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বিশ্লেষণে কোনো ধরনের সম্পাদনা, বিকৃতি বা কৃত্রিমভাবে তৈরি করার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, এটি একটি জেনুইন এবং অখণ্ড রেকর্ডিং। মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ইয়ারশট’ জানায়, ফোনকলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল এবং একটি ঘরে এটি ধারণ করা হয়েছিল। কারণ, রেকর্ডিংয়ে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং পটভূমিতে কিছু শব্দ ধরা পড়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংয়ের মধ্যে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ENF) শনাক্ত করেছেন, যা প্রমাণ করে অডিওতে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা সম্পাদনা করা হয়নি। বিশ্লেষণের সময় শেখ হাসিনার বক্তব্যের ছন্দ, স্বর ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণ এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও পরীক্ষা করা হয়েছে, যাতে কোনো কৃত্রিম হেরফেরের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, এই রেকর্ডিংগুলো শেখ হাসিনার দায়িত্ব প্রমাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অডিওগুলো যথাযথভাবে যাচাই করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণের সঙ্গে মিল রয়েছে।