শুধু ৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে ইতিহাসের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি গোলকিপার ফাবিও। বয়স ৪৪ পার করে এখনো তিনি মাঠে একদম অনড়-দৃঢ় মনোবল, অবিচল লক্ষ্য আর অস্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন এমন এক রেকর্ডের দিকে, যা ফুটবলের ইতিহাসে খুব কমজনই ছুঁতে পেরেছেন। প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমিয়েও ফাবিও গোলপোস্টের নিচে অদম্য। এটিই যেন তার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থা পরিচিত “শর্ট স্লিপার সিনড্রোম” নামে, যা পৃথিবীর মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এ ধরনের মানুষদের ঘুমের সময় অল্প হলেও গভীর ঘুম হয়, ফলে শরীরের রিকভারি বা বিশ্রামে কোনো ঘাটতি পড়ে না। ফাবিও নিজেই বলেছেন, “ভোর ৪টায় ঘুমাতে গেছি, ৭টায় উঠেছি। মেয়েকে স্কুলে, ছেলেকে ড্রাইভিং ক্লাসে দিয়ে আমি ট্রেনিংয়ে চলে এসেছি। আমি জিম করি না, ম্যাসাজ নিই না, তবুও ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারি। আমার ঘুমের গভীরতা এমনই যে, অল্প সময়েই আমি পুরোপুরি রিফ্রেশ হয়ে যাই।” তার এই দৈনন্দিন অভ্যাস শুনে হয়তো অনেকেই চোখ কপালে তুলবেন, কিন্তু বাস্তবে ফাবিও নিজেই এক চলমান বিস্ময়। ফুটবল ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১,৩৭৮টি অফিসিয়াল ম্যাচ, যা তাকে নিয়ে এসেছে ইতিহাসের একেবারে কাছাকাছি। বর্তমানে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পিটার শিলটনের ১,৩৯০ ম্যাচের রেকর্ডই সবচেয়ে বেশি, আর সেটি ভাঙতে ফাবিওর প্রয়োজন মাত্র ১২টি ম্যাচ। ফ্লুমিনেন্সের হয়ে নিয়মিত খেলার কারণে এই রেকর্ড হাতের নাগালেই।
২০২3 সালে ক্লাব বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর আবারও শিরোনামে আসেন ফাবিও। ইন্টার মিলানের মতো ইউরোপীয় জায়ান্টদের বিপক্ষে ক্লিন শিট রাখা তার এই বয়সে এক অনন্য অর্জন। শুধু তাই নয়, পুরো ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৫০৭টি ক্লিন শিট করেছেন তিনি, যা ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনকেও পেছনে ফেলেছে। তবে তার এই উত্থান রাতারাতি হয়নি। ১৯৯৭ সালে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। খেলেছেন ব্রাজিলের বয়সভিত্তিক দলে, ছিলেন ২০০৪ সালের কোপা আমেরিকা জয়ী দলের অংশ, যদিও সেবার মাঠে নামার সুযোগ পাননি। কিন্তু ক্লাব পর্যায়ে তার প্রভাব বিশাল—ভাস্কো দা গামা ও ক্রুজেইরোর হয়ে খেলেছেন দারুণ সাফল্যের সঙ্গে। বিশেষ করে ক্রুজেইরোতে ১৬ বছর ধরে অবিচল থাকার কারণে তিনি ক্লাবটির কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন।সমালোচনা, চ্যালেঞ্জ, বয়স-সবকিছুকে পেছনে ফেলে ফাবিও প্রমাণ করেছেন যে, মানসিক দৃঢ়তা আর পেশাদারিত্ব থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়। তিনি বলেন, “আগে যতটা ভালো ছিলাম, এখন তার চেয়েও ভালো মনে হয়। বয়স আমার কাছে কোনো বিষয় না। আমি নিজের খেলাকে প্রতিদিন বিশ্লেষণ করি এবং উন্নতি করি।”
এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি মোকাবিলা করেছেন রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনহো, রিভালদোদের মতো কিংবদন্তিদের। এমনকি ঠেকিয়েছেন তাদের পেনাল্টিও। একবার নয়, বহুবার। আর এখন? লক্ষ্য একটাই-সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড নিজের করে নেওয়া। আর সেটি যদি হয় দিনে মাত্র ৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে, তবে ফাবিওকে নিয়ে বলতেই হয়-এই মানুষটি শুধু একজন গোলরক্ষক নন, তিনি এক জীবন্ত প্রেরণা।