চীনের খ্যাতনামা উদ্যোক্তা এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বিশ্বজুড়েই এক বড় অনুপ্রেরণার নাম। তিনি কেবল একজন সফল ব্যবসায়ীই নন, একজন অসাধারণ বক্তাও বটে। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হংকংয়ে ‘অ্যান ইভিনিং উইথ জ্যাক মা’ নামের এক অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি অনুপ্রেরণাদায়ী একটি বক্তব্য দেন, যা আজও অনেককে প্রভাবিত করে। সেদিন জ্যাক মা বলেন, “আমি যেটা ভাবি, তা সব সময় সঠিক হয় না। কাউকে আমি শেখাতে চাই না কী করা উচিত আর কী নয়। বরং একজন বড় ভাইয়ের মতো আমি শুধু নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু কথা বলি।” নিজের পথচলার সূচনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, যখন ১৫ বছর আগে তিনি ব্যবসা শুরু করেন, তখন তার হাতে তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তিনি বাসায় ২৪ জন বন্ধুকে ডেকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দুই ঘণ্টার বোঝানো সত্ত্বেও মাত্র একজন তাকে সমর্থন করেন, বাকিরা না করে দেন। জ্যাক মা বলেন, “আজকের তরুণদের যেসব দক্ষতা থাকে, সেগুলোর কোনোটি আমার ছিল না। অনেকেই প্রশ্ন তুলত-‘তোমার কী যোগ্যতা আছে? তুমি তো না ম্যানেজমেন্ট শিখেছ, না অ্যাকাউন্টিং, এমনকি কম্পিউটার সম্পর্কেও ভালো জানো না।’”
তিনি অকপটে স্বীকার করেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আমি গণিতে মাত্র ১ নম্বর পেয়েছিলাম। তিনবার চেষ্টা করেও ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাইনি। শেষ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিলাম হ্যাংঝৌ নরমাল ইউনিভার্সিটিতে, যেটি তখনকার সময় ‘চতুর্থ শ্রেণির’ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আজ আমি মনে করি, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার কাছে হার্ভার্ডের চেয়েও বড় হয়ে আছে।” তার মতে, অনেক সময় যারা প্রথাগত শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকে, তাদের জন্য উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা তুলনামূলক সহজ হয়ে দাঁড়ায়।তিনি আরও বলেন, “আমরা যারা বিশেষ কোনো প্রভাবশালী পরিবার থেকে আসিনি, তারাই একত্র হয়ে আলিবাবা শুরু করেছিলাম। আমাদের ১৮ জনের সম্মিলিত পুঁজি ছিল মাত্র ৫ লাখ আরএমবি। পরিকল্পনা ছিল, যদি ১২ মাসের মধ্যে ব্যবসা দাঁড় না করানো যায়, তাহলে অন্য কিছু ভাববো। কিন্তু অষ্টম মাসেই সব পুঁজি ফুরিয়ে যায়।” তিনি জানান, সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে ৩০ জন বিনিয়োগকারীর কাছে প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন তিনি এবং তার সহকর্মী জো সাই। তবুও তারা হাল ছাড়েননি। তার মতে, “পরিকল্পনা করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই পরিকল্পনার ওপর বিশ্বাস রাখা।” তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “স্বপ্ন থাকা জরুরি। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাদের সন্তানরা ঘন ঘন স্বপ্ন বদলায়। আমি বলি, এটা একদম স্বাভাবিক। অন্তত সে স্বপ্ন দেখছে, ভাবছে, খুঁজছে। বরং যাদের কোনো স্বপ্নই নেই, সেটাই চিন্তার বিষয়।”
নিজের অতীত জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি পুলিশ হতে চেয়েছিলাম, এমনকি কেএফসিতেও আবেদন করেছিলাম। ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জন চাকরি পেলেও, আমি পাইনি।” তিনি বলেন, “স্বপ্ন দেখে নয়, বরং বাস্তবতাকে ভিত্তি করেই আমরা একসঙ্গে আলিবাবার যাত্রা শুরু করেছিলাম। ১৮ জন মানুষ মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা আমাদের বিশ্বাসে অটল থাকব।” তার শেষ বার্তায় ছিল তরুণদের উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: “তোমার যদি সত্যিকারের কোনো স্বপ্ন থাকে, তাহলে তুমি কি সেটা অর্জনের জন্য লড়াই করতে রাজি? তুমি কি অন্যদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে সেই যাত্রায় এগোতে প্রস্তুত? মনে রেখো, একা পথ চলা কঠিন এবং ক্লান্তিকর। কিন্তু সঠিক দল পেলে, অসম্ভবও সম্ভব হয়ে ওঠে।”