যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীরাও এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন দমন অভিযানের আওতায় পড়েছেন। তাদের অনেককেই এখন দেশছাড়া হওয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নির্বাচনের আগে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বহিষ্কার অভিযানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ট্রাম্প এবার দৃষ্টি দিয়েছেন ১২ লাখ অভিবাসীর দিকে, যারা অস্থায়ী সুরক্ষা (টিপিএস) সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। এই সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসীদের, যেটা আগের প্রশাসন, বিশেষ করে জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন সরকার দিয়ে আসছিল। টিপিএস সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে তারা ১৮ মাস পর্যন্ত থাকার ও কাজ করার অনুমতি পেতেন, যা নির্ধারিত সময় পর পুনর্নবায়নযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সচিব ক্রিস্টি নোম অন্তত ৭ লাখ টিপিএসধারীর সুরক্ষা বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওস।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাইতির ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৭ জন নাগরিক, যারা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৭ জন এবং আফগানিস্তানের ১১ হাজার ৭০০ জন নাগরিকও এই সিদ্ধান্তের শিকার হচ্ছেন। একজন টিপিএসধারী হাইতিয়ান বলেন, “আমি কখনো অবৈধভাবে এখানে প্রবেশ করিনি বা অবস্থান করিনি। আমি অপরাধী নই।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি আমাকে হাইতিতে ফিরে যেতে হয়, তাহলে শুধু প্রার্থনা করব যেন গুলি খেয়ে মারা না যাই।” এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষের ওপর, যার মধ্যে রয়েছেন ৫২ হাজার হন্ডুরাসের নাগরিক ও ৩ হাজার নিকারাগুয়ান, যারা ১৯৯৯ সাল থেকেই টিপিএস সুবিধার আওতায় ছিলেন। হন্ডুরাসের দূতাবাসের উপপ্রধান লিওনার্দো ভালেনজুয়েলা নেদা বলেন, “হন্ডুরাস এখন এত সংখ্যক অভিবাসীকে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত নয়।” এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এখন বাইডেনের সময় দেওয়া মানবিক ‘প্যারোল’ সুবিধা পাওয়া অভিবাসীদের প্রতিও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। এই সুবিধায় অভিবাসীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান ও কর্মসংস্থানের অনুমতি পেতেন। তবে এখন অভিবাসন আদালতগুলো তাদের মামলার শুনানি বাতিল করছে।
এই অভিবাসীদের অনেককে এখন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা গ্রেফতার করে শুনানিবিহীনভাবে বহিষ্কার করছে। মানবাধিকার কর্মীরা একে ‘রিমুভালপালুজা’ বা ‘বহিষ্কারের উৎসব’ বলে সমালোচনা করেছেন। এই পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের বহিষ্কার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ আইসিই-এর অভিযান দিন দিন আরও জোরদার হচ্ছে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব অভিবাসী অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তারা এখন থেকে আদালতে বহিষ্কার প্রক্রিয়া চলাকালীন জামিন চাইতে পারবেন না। ৮ জুলাই আইসিই’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স এক নির্দেশনায় জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের পুরো প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিবাসীদের আটক রাখা যাবে, যা মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছরও স্থায়ী হতে পারে। এই নির্দেশনা লক্ষাধিক সাম্প্রতিক অভিবাসীর ওপর প্রযোজ্য হবে।
বহিষ্কারের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে কংগ্রেস সম্প্রতি ৪৫ বিলিয়ন ডলারের চার বছর মেয়াদি বাজেট অনুমোদন করেছে, যা অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও ফেরত পাঠানোর কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেছেন, “টিপিএস প্রোগ্রাম কখনোই স্থায়ী নাগরিকত্ব বা আবাসনের সুযোগ দেওয়ার জন্য ছিল না।” তার দাবি, “বাইডেন প্রশাসন এই প্রোগ্রামের অপব্যবহার করেছে।” সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এখন বৈধ এবং অবৈধ-দুপ্রকার অভিবাসীর বিরুদ্ধেই কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ শুরু করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এক নতুন ধারা তৈরি করছে।