গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাদের গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে এনসিপি নেতৃত্ব। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি যথারীতি পালন করা হবে। এর মধ্যে ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এনসিপি কর্মী-সমর্থকরা এই পদযাত্রায় অংশ নেবেন। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বিবেচনায় মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে নির্ধারিত কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে নতুন তারিখে আয়োজনের কথা জানিয়েছে দলটি। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জে আমাদের নেতাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা কোনো সাধারণ হামলা নয়—এটি ছিল একটি হত্যাচেষ্টা। একেবারে জঙ্গি কায়দায়, পরিকল্পিতভাবে আমাদের ধ্বংস করতে চেয়েছে তারা। বহুদিন ধরেই আওয়ামী লীগ এই পরিকল্পনা করে আসছিল। গোপালগঞ্জ এখন আর সাধারণ একটি জেলা নয়—এটি এখন পরিণত হয়েছে ফ্যাসিস্ট রাজনীতির এক নিরাপদ আশ্রয়স্থলে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনার মাধ্যমে তারা একটি বার্তা দিতে চেয়েছে—এই জেলা নাকি আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকবে, অন্য কেউ এখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তারা সেই মিথ ভেঙে দিয়েছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির উপস্থিতি এবং কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, এই দেশে একক কর্তৃত্বের রাজনীতি আর চলবে না।” এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যদি সরকার সত্যিই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে অবিলম্বে গোপালগঞ্জের হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, যার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।” এদিকে গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এনসিপির বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনেক স্থানে রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নজরদারি ও বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষপাতী। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হলে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের পথেই ফিরতে বাধ্য হব।”
দলের পক্ষ থেকে সব জেলার নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, সাধারণ জনগণ ও সব স্তরের শিক্ষার্থী-যুবকদের এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, “এটি শুধু একটি দলের বিরুদ্ধে হামলা নয়—এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুদলীয় অংশগ্রহণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই।” সারা দেশে বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে এনসিপি নেতৃত্ব আরও জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে তারা বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে বসবে এবং আরও শক্তিশালী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।