ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শিকলে বাঁধা কুকুর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো ধরনের সামরিক হামলার জবাব দিতে ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে এবং তারা প্রয়োজন পড়লে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কঠোর জবাব দিতে সক্ষম। বুধবার (১৬ জুলাই) ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত এক বক্তৃতায় আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘আমাদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং এর শিকলে বাঁধা কুকুর ইহুদিবাদী ইসরাইলের মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে জবাব দিতে প্রস্তুত এবং আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করা হচ্ছে।’ গত মাসে ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ইসরাইল একটি হামলা চালায়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। এর জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এই হামলার উল্লেখ করে খামেনি বলেন, ‘আমরা যে ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছি, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল আঞ্চলিক ঘাঁটি। আমাদের হাতে আরো বড়ো ধরনের হামলার ক্ষমতাও রয়েছে, যা প্রয়োজনে প্রয়োগ করা হবে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, ইরান তাদের আগ্রাসন মোকাবেলায় কঠোর ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পুনরায় আলোচনায় ফেরার চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তিন শক্তিশালী দেশ—ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি—ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল করার জন্য আগামী আগস্ট মাসের শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। যদি ওই সময়ের মধ্যে আলোচনা থেকে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হয়, তাহলে জাতিসংঘের ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে আবারও কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি সতর্ক করে বলেন, ‘আগামী সময়সীমার মধ্যে যদি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা কার্যকর না হয়, তাহলে আমরা পুনরায় কঠোর পদক্ষেপে যেতে বাধ্য হবো। এই প্রক্রিয়া কার্যকর হলে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।’
খামেনি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমরা সবসময় কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাই, কখনোই দুর্বলতা প্রদর্শন করি না।’ তিনি কূটনীতিকদের ‘সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করে’ আলোচনাকে জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন, যদিও তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।অন্যদিকে, একই দিনে ইরানের পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বশর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু করা উচিত নয়। তারা দাবি করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আগে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে হবে, তারপরই ইরান আলোচনায় ফিরে আসবে। সামগ্রিকভাবে খামেনির এই ভাষণ এবং পার্লামেন্টের অবস্থান ইরানের কঠোর এবং আত্মবিশ্বাসী অবস্থানের প্রমাণ দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য কঠিন বার্তা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। পাশাপাশি পারমাণবিক চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার প্রসঙ্গে চলমান উত্তেজনা ও রাজনৈতিক চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।