গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের একদল ও স্বার্থান্বেষী মহলকে ব্যবহার করে এ মামলা করানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। হারুন অর রশিদ টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে টঙ্গী পূর্ব থানার বিএনপির সহ-সভাপতি পদে কর্মরত তিনি। এর আগেও সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া গাজীপুর মহানগর বিএনপির প্রথম কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন, যেখানে সভাপতিত্ব করেন হাসান উদ্দিন সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সোহরাব উদ্দিন। অভিযোগ উঠেছে, হারুন অর রশিদ দীর্ঘকাল বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মী হলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মামলার আসামি হওয়ায় এলাকাবাসী কিছুটা বিস্মিত। স্থানীয় বিএনপি এবং সচেতন মহল এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মামলাটি সম্প্রতি বাড্ডা থানায় দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ করেছে এসএম নাজমুল আলম নামে এক ব্যক্তি, যিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার জয়নগর এলাকার বাসিন্দা। মামলায় বাদীর বর্তমান ঠিকানা বাড্ডার আদর্শ নগর উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং প্রথম আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান কামাল প্রমুখের নাম আসামি তালিকায় রয়েছে।
বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে এবং প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ নেই, তাদের কোনোভাবেই হয়রানি করা হবে না। স্থানীয় সূত্র জানায়, টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার গ্রেফতারের পর কলেজের গভর্নিং বডি দীর্ঘ আলোচনা ও বিবেচনার পর ১৯ মে কলেজের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে এর পর থেকেই স্বার্থান্বেষী একটি মহল তাকে লক্ষ্য করে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। হারুন অর রশিদ অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে কলেজে লুটপাট, দুর্নীতি ও অনিয়ম ছিল, যা তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর বন্ধ করে দিয়েছেন। আর্থিক স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই উন্নয়নের বিরোধিতায় ওই স্বার্থান্বেষী মহল তাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।তিনি আরো বলেন, তিনি সারাজীবন জাতীয়তাবাদী আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগের আমলেও তিনটি রাজনৈতিক মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে, যা ছিল হয়রানিমূলক। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের অবশিষ্ট ষড়যন্ত্র তাকে পুনরায় মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। তিনি পুলিশের কাছে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবী করেছেন এবং মিথ্যা মামলার নাম তার বিরুদ্ধে থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম জানান, তার থানায় হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানা নেই। স্থানীয় বাসিন্দা মোকাররম হোসেন বলেন, হারুন অর রশিদ একজন সৎ ও সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি কখনো কাউকে কষ্ট দেননি এবং আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। টঙ্গী পূর্ব থানার বিএনপি সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন জানান, হারুন অর রশিদ দীর্ঘদিনের বিএনপি নেতা। তিনি কখনো অন্য কোনো দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না। একটি ষড়যন্ত্রমূলক মহল তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে তুলে ধরেছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কিছু দোসর হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক ও বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতা।’