গত বছরের এ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে প্রাণ হারান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। এক বছর পেরিয়ে গেল, মুগ্ধ শারীরিকভাবে আর নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া মুগ্ধতা আজও আন্দোলনের স্লোগানে এবং তার পরিবারের হৃদয়ে জীবন্ত রয়েছে। মুগ্ধর জীবনের শেষ দিন ছিল অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। তিনি পরিবারের সদস্যদের বাসস্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিলেন, যারা কক্সবাজার ও উখিয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বিদায়ের সময় মায়ের প্রতি কেবল দুই শব্দ বলেছিলেন - ‘আম্মু, যাই।’ সেই ছিল তাদের শেষ সাক্ষাৎ। কেউ কল্পনাও করেনি যে, আর কখনো ছেলের মুখ দেখা হবে না। পরিবারের সবাই তখনো জানতেন না, যে হাসিমুখে বিদায় নেয়া ছেলে সেই একই বিকেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। সেইদিন বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে মুগ্ধ আজমপুর এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র ও জনতাকে পানি খাওয়াচ্ছিলেন। ২৮ মিনিট পর, বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যুর মাত্র ৯ মিনিট আগে নিজের মোবাইলে একটি ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন, যেখানে তিনি উপস্থিত সবাইকে গুলির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। সেটাই ছিল তার শেষ বার্তা।
তার বাবা মীর মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘চোখের নিচের তিলটাই ছিল পার্থক্য—জানাতো কোনটা মুগ্ধ, কোনটা স্নিগ্ধ। এখন সে তিলটাই তার একমাত্র স্মৃতি ও সম্বল।’ মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে মুগ্ধ পরিবারের কাছে আন্দোলনে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিলেন। বড় ভাই দীপ্তের সঙ্গে তার বন্ধুর মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মুগ্ধর মৃত্যুসংবাদ শুনতে হয়েছিল বড় ভাইকে না হয়ে ছোট ভাই স্নিগ্ধকে, যিনি ফোনে সে খবরটি দিয়েছিল। পরিবার চেয়েছিল মুগ্ধকে দাফন করা হবে উত্তরার তার দাদা-দাদির কবরের পাশে, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে শায়িত করা হয় কামারপাড়া কবরস্থানে, যেখানে সাধারণত শুধুমাত্র এলাকার ভোটারদের দাফন করা হয়। কিন্তু মুগ্ধের জন্য সেই নিয়ম ভাঙা হয়েছিল। মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমবিএ করছিলেন। তার একটি অপূর্ণ স্বপ্ন ছিল বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়া, যা আর পূরণ হয়নি।
উত্তরার তার বাসার গলির নাম এখন ‘মীর মুগ্ধ সড়ক’। সেখানে আর মুগ্ধর পায়ের শব্দ শোনা যায় না, কিন্তু তার নাম প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি হয়ে আজও জ্বলজ্বল করছে। সেই তরুণ যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল, তার নাম এখন ইতিহাস হয়ে গেছে।