বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো এককভাবে বড় সমাবেশ আহ্বান করেছে সাত দফা দাবিকে সামনে রেখে। আজ শনিবার দুপুর ২টায় এ সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। ইতোমধ্যে সেখানে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যার দিক থেকেই নেতাকর্মীরা উদ্যানে সমবেত হতে শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় পৌঁছেছেন সমাবেশে অংশ নিতে। জামায়াত অতীতে কখনো এই উদ্যানে এককভাবে সমাবেশ করেনি। যদিও জোট বা অন্য দলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে তারা। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আজকের সমাবেশটি হবে তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জমায়েত। জামায়াত বড় সমাবেশের মাধ্যমে রাজনীতির ময়দানে নতুন করে আলোড়ন তুলতে চায়। এ সমাবেশ থেকেই দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান নতুন প্রজন্মের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। তিনি গণহত্যার বিচার, নির্বাচন সংস্কার ও চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানাবেন। অনুষ্ঠানের প্রধান মঞ্চে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় বিশাল ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য ছাউনি, চিকিৎসা সেবা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আয়োজকরা জানাচ্ছেন, একটি ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যাতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, এলইডি মনিটর ও অতিথিদের জন্য বসার ব্যবস্থা থাকবে। সমাবেশ সফল করতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশজুড়ে গণসংযোগ, প্রস্তুতি সভা, মিছিল ও সমাবেশ চালিয়ে গেছেন। এ লক্ষ্যে প্রায় ১০ হাজার বাস ও কয়েক জোড়া ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে লোকজন লঞ্চযোগেও শুক্রবার ঢাকায় রওনা হয়েছেন। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নেতারাও আমন্ত্রিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক চলছে, তখন জামায়াত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসমাগমের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চায়। এজন্য ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে, যানবাহন পার্কিং, অজু-নামাজ, টয়লেট ও চিকিৎসা বুথের মতো সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জামায়াতের সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।
জানা গেছে, এতদিন জামায়াত ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু কর্মসূচি পালন করলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে বড় কোনো সমাবেশ করেনি। তবে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনের নতুন গতি পাওয়ার পর দলটি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূলে ব্যাপক সক্রিয় হয়ে ওঠে। আজকের এই সমাবেশকে জামায়াত সেই পুনরুজ্জীবনের প্রতীক হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা সংগঠনের সক্ষমতা নতুনভাবে তুলে ধরতে চায়।