বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার অফিসারদের পরবর্তী পদোন্নতির জন্য গঠিত ‘সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার (২০ জুলাই) সকালে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেন তিনি। সেনাবাহিনীর অবদান জাতির জন্য গর্বের বিষয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণ করেন তিনি। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে শহীদ ও আহত সেনাসদস্য এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করেন। এইসব বীর সন্তানদের ত্যাগের ফলে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে অফিসারদের পেশাদারিত্ব, নেতৃত্বের গুণাবলি, শৃঙ্খলা, সততা, আনুগত্য ও নিযুক্তিগত যোগ্যতাকে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর উচ্চপদে যারা উন্নীত হবেন, তাদের অবশ্যই সৎ, নীতিবান এবং দক্ষ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হতে হবে। শুধুমাত্র যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হবে, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবের কোনো স্থান থাকবে না।” এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নীতি ও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর অবদান অতুলনীয়। বিশেষ করে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার মাধ্যমে তারা যে ত্যাগ স্বীকার করছেন, তা জাতির জন্য এক অনন্য গর্বের বিষয়। দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি সেনাপ্রধানসহ সকল সদস্যের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান এবং সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ উদ্বোধনের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান ছাড়াও বিভিন্ন সেনা ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, যারা সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নিয়োজিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন এবং পরিদর্শন বইয়ে তাঁর মূল্যবান মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও দক্ষ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর কর্নেল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার অফিসারদের জন্য এই নির্বাচনী পর্ষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা যোগ্যতা, দক্ষতা ও নীতিনিষ্ঠার ভিত্তিতে পদোন্নতি নিশ্চিত করবে। এটি সেনাবাহিনীর সার্বিক পেশাগত উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং দেশের নিরাপত্তা ও অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।