তীব্র তাপপ্রবাহে নাস্তানাবুদ ইরান। দেশজুড়ে দাবদাহের প্রকোপে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরমের তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেক স্থানে দিনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে। এই ভয়াবহ গরমের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন পানির সংকট। এ অবস্থায় ইরান সরকার নাগরিকদের পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরার। ইরানের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ তাপমাত্রার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রা গত কয়েক দশকের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে প্রচণ্ড গরমের কারণে জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমের কারণে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় এনে ইরান সরকার ২৩ জুলাই মঙ্গলবার তেহরান প্রদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি এই সিদ্ধান্তের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান। তিনি বলেন, “তীব্র তাপপ্রবাহ এবং পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এনে তেহরানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রোববার তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সেটি বেড়ে ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুধু তাপপ্রবাহই নয়, গরমের কারণে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহার। এর ফলে দেশজুড়ে পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। ইরানে পানির সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও বর্তমানে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পানির এই ঘাটতির জন্য কর্তৃপক্ষ অব্যবস্থাপনা ও ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনকে দায়ী করছে। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবও প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইসনা জানিয়েছে, তেহরান সিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেহেদী চামরান জনগণকে পানি সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে পানি ব্যবহারে সচেতন ও সংযমী হতে হবে। কারণ জলাধারগুলোতে পানি ভয়াবহভাবে কমে গেছে।” এদিকে তেহরান প্রদেশের পানি সরবরাহকারী কোম্পানির পক্ষ থেকেও নাগরিকদের পানি ব্যবহার ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের দাবি, অঞ্চলের প্রধান প্রধান বাঁধের জলাধার বর্তমানে শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানায় তারা।
ইরানের অন্যতম প্রধান দৈনিক জাভান শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীর কিছু এলাকায় দিনে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় অর্ধেক সময় পানির অভাবে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই সংকট নিয়ে রোববার দেশটির খনিজ সম্পদ মন্ত্রী আব্বাস আলিয়াবাদি আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদ আরও দক্ষভাবে ব্যবস্থাপনা করার লক্ষ্যে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।” উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে ইরানে তাপপ্রবাহের প্রকোপ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অপরিকল্পিত পানি ব্যবস্থাপনা এবং ভূগর্ভস্থ পানি অপচয়ের কারণে দেশটি বারবার পানির সংকটে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।