নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, জুলাই মাসের মধ্যেই সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে-আর হাতে সময় আছে মাত্র ১০ দিন। সেই সময়সীমার কথা মাথায় রেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। সোমবার (২১ জুলাই) সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৬তম দিনের সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “আজসহ হাতে ১০ দিনের মতো সময় রয়েছে। এর মধ্যেই আমাদের জাতীয় সংস্কারের প্রতিটি বিষয়ে সম্মতিতে পৌঁছাতে হবে। সময় খুব বেশি নেই। অতএব, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
তিনি বক্তৃতায় স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “আমাদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধ কোনো একদিনের ঘটনা নয়। এটি ছিল দীর্ঘ এক সংগ্রামের ফল, যার জন্য লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পথ ধরে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক ও বীরত্বপূর্ণ অধ্যায়।” তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পরের ৫৩ বছর আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে এসেছি। একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা ছিল অব্যাহত। কিন্তু এ পথও সহজ ছিল না। মাঝখানে আমরা ফ্যাসিবাদের শাসনে নিপতিত হয়েছিলাম, যেখানে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। সেখান থেকে জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে, মতপার্থক্য পেছনে ফেলে আমরা আবার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসেছি।” আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান এবং হাজারো মানুষের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে আমাদের সামনে এগোতে হবে। এই মুহূর্তে পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ শাসনের বিরুদ্ধে লড়েছি, এখন সেভাবেই সকল দলকে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে-প্রয়োজনে এক-দুদিন সময় বাড়ানো যেতে পারে-আমাদের সংস্কারের প্রতিটি বিষয়ের ওপর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে আর কোনো বিলম্ব কাম্য নয়।”
তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার কাজ এখন আর কোনো একটি দলের নয়, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দেশপ্রেম ও অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায়, আমাদের এত বছরের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।” এই বক্তব্যে ড. আলী রীয়াজ মূলত দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন, যাতে দেশের মানুষ অচিরেই একটি সহিষ্ণু, কার্যকর ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার সুফল পেতে পারে।