পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীরা বর্তমানে মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। দেশে ডোপ টেস্ট কিটের সংকট এবং পরীক্ষাগারগুলোর সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে এই প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে, যার ফলে শত শত আবেদনকারী সমস্যার মুখে পড়ছেন। মো. আতিকুল ইসলামের অভিজ্ঞতা থেকেই পরিস্থিতির জটিলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আতিকুল ইসলাম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএতে আবেদন করেন এবং তাকে ডোপ টেস্টের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি প্রথমে নিটোরে গেলে ‘কিট শেষ হওয়ায় ডোপ টেস্ট বন্ধ’ লেখা দেখতে পান। এরপর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে গেলে জানানো হয়, কেবল ঢাকা জেলার বাসিন্দাদেরই টেস্ট করানো হচ্ছে। পরবর্তীতে তিনি মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে গিয়ে জানতে পারেন, কিট স্বল্পতায় সেখানে প্রতিদিন মাত্র ৫-৭ জনের পরীক্ষা হচ্ছে এবং সিরিয়াল অনুযায়ী আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের পর তার টেস্ট সম্ভব। তাকে পরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠানো হলে জানা যায়, সেখানে দৈনিক ৩০ জনের সিরিয়াল নেওয়া হয়, তাড়াতাড়ি টেস্ট করানো সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত তিনি তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় হাসপাতালে গিয়ে ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে সক্ষম হন।
ডোপ টেস্ট করানো যায় এমন বিভিন্ন হাসপাতালের ল্যাবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু আতিকুল নয়, বহু আবেদনকারী একই সমস্যার ভুক্তভোগী। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর অবস্থাও একই রকম। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট মো. আ. রহমান দেওয়ান জানিয়েছেন, আগের অর্থবছরে কেনা রিএজেন্ট মাত্র এক মাসের জন্য যথেষ্ট। নতুন করে দরপত্র না হওয়া পর্যন্ত সংকট কাটবে না। নিটোরের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. ফরহাদ মাহমুদ জানান, আগে প্রতিদিন ১৫০-২০০ জনের টেস্ট হতো, কিন্তু কিট ফুরিয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, সরবরাহ পেলে পরীক্ষা আবার চালু হবে। নিটোরের পরিচালক ডা. আবুল কেনান বলেছেন, রিএজেন্ট সংকট রয়েছে, সরবরাহ প্রক্রিয়াধীন। বিস্তারিত জানতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক ডা. এম সাহাবুদ্দিন আহামদ জানিয়েছেন, কোভিডকালে ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত জনবল থাকায় টেস্ট কার্যক্রম সহজ ছিল, কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ায় জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। এখন শুধু ঢাকা জেলার এনআইডি থাকা ব্যক্তিদের টেস্ট করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু আহসান মো. মঈনুল হোসেন বলেছেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এমএসআর বাজেট থেকেই ডোপ টেস্টের কিট ও রিএজেন্ট কেনার বিধান রয়েছে। সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব সরবরাহ করে না। ফলে হাসপাতালে কিট না থাকলে তার দায় সংশ্লিষ্ট পরিচালকের।
চিকিৎসকদের মতে, মাদকাসক্ত কিনা তা নির্ধারণে ডোপ টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা শরীরে মাদকজাত পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করে। নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণকারীদের দেহে এসব উপাদানের কিছু অংশ থেকে যায়, যা টেস্টে ধরা পড়ে।