মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামে ঘটেছে এক চরম দুঃসাহসিক প্রতারণা। “লক্ষীপুর উদয়ন সংঘ” নামে সমাজসেবা অধিদপ্তরে রেজিস্ট্রিভুক্ত একটি সংগঠনের নামে থাকা রেকর্ডভুক্ত কবরস্থানের জমি বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছে সংঘবদ্ধ একটি অসাধু চক্র-এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের সাবেক কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, সংঘের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মোঃ টিপু সুলতান, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম ও সহ-সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঠাকুর মিলে নিজেদের স্বজনদের নিয়ে পুরনো তারিখে একটি জাল রেজুলেশন তৈরি করেন এবং তার ভিত্তিতে ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি অবৈধ কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘদিনের প্রকৃত সদস্যদের সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে এ কমিটি গঠনের পর, একটি জাল সভার কাগজপত্র তৈরি করে নিজেদের ‘আমমুক্তার’ ঘোষণা দিয়ে সংঘের কবরস্থানের জমি গোপনে বিক্রি করে দেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো- সরকারি রেকর্ডে জমিটি “কবরস্থান” হিসেবে নির্দিষ্ট থাকলেও, সেটিকে ভূমি অফিসের একাংশের সহযোগিতায় “ধানিজমি” দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়। অথচ ঐ জমির একাংশে এখনও বিদ্যমান রয়েছে শিশুকবর- যা ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার প্রতি সরাসরি অবমাননার শামিল।
অভিযোগ রয়েছে, বিক্রি হওয়া জমির পাশাপাশি সেখানে থাকা বহু পুরনো গাছ বিক্রির টাকাও গোপনে আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল সুপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যার মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নাম ব্যবহার করে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক সম্পদ ব্যক্তি স্বার্থে লুট করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জনাব মোঃ জাকির হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অভিযোগে চারটি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়েছে—
১. সংঘের জমি বিক্রির অবৈধ দলিল বাতিল করতে হবে
২. বিক্রিত জমি পুনরায় “লক্ষীপুর উদয়ন সংঘ”-এর নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হবে
৩. অবৈধ কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
৪. প্রকৃত ও প্রমাণিত সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি নতুন, স্বচ্ছ ও বৈধ কমিটি গঠন করতে হবে
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “এটা শুধু জমির ব্যাপার নয়- এটা একটি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়, নৈতিক দায়িত্ব এবং একটি ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক। এই কবরস্থানের জমি বিক্রি করে প্রতারণা শুধু আইনভঙ্গ নয়, এটি মানবিকতাকেও অপমান করেছে।” ঘটনার গভীরে তদন্তের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী বলেন, এই প্রতারণা ও আত্মসাতের ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত যেন ভবিষ্যতে আর কেউ না গড়তে পারে, সেজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ জরুরি।
লিংক ১: জমি বিক্রির মূল দলিল ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দেখতে ক্লিক করুন।