দুদকের দায়ের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। শুনানিতে আদালত উল্লেখ করেন, ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে একটি ট্রুথ কমিশন গঠিত হয়েছিল, যেখানে দুর্নীতিগ্রস্তরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের কাছে ফেরত দিয়েছিল। সেই সময় ধারণা করা হয়েছিল যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও দুর্নীতি প্রতিরোধে এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং পাচারকৃত অর্থ রাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে, কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব বুধবার (২৩ জুলাই) এ মন্তব্য করেন। আদালত আরও বলেন, সোনালী ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ‘কোনো বড় টাকাই নয়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
আদালত আরো বলেন, বর্তমানে দুদক এই পরিমাণ দুর্নীতির বিচার ও শাস্তি দিতে পারছে না। দুর্নীতির মামলায় শাস্তিও খুব কম সময়ের হয়ে থাকে; যেমন পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির জন্য মাত্র পাঁচ বছরের সাজা হয়। আদালত আবুল বারকাত ও দুদক প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জনতা ব্যাংকের দুর্নীতির এলিগেশন অনেক বড়, যদিও সব অভিযোগে আবুল বারকাত জড়িত বলে আমি মনে করি না। তবে তিনি ধৈর্য ধারণ করবেন। বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য ব্যাংকের বোর্ডের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এরপর আদালত আবুল বারকাতের জামিন নামঞ্জুর করে এ মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড শুনানির জন্য সিএমএম আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেয়া হয়।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আবুল বারকাতকে আদালতে হাজির করা হয় এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ১১টা ৭ মিনিটে তাকে আদালতে তোলা হয়, যেখানে তিনি কাঠগড়ায় বসেন এবং চিন্তিত ভঙ্গিতে দেখা যায়। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুর ইসলাম জামিনের জন্য শুনানি করেন। শাহিনুর বলেন, ২০১৩ সালে এননটেক্স গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুপ্রভা স্পিনিং মিলস ঋণের আবেদন করেছিল। তাদের আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ড. আবুল বারকাত কোনো দায়িত্বে অবহেলা করেননি বা নীতিমালা লঙ্ঘন করেননি। তিনি আরো বলেন, পূর্বে একই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করেছিল এবং দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায়নি। এখন নতুন করে মামলা করা দ্বৈত মানসিকতা ছাড়া কিছু নয়। তাই আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো যৌক্তিকতা নেই। সব দিক বিবেচনায় তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করার অনুরোধ করছি।
তবে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন কর্মচারীদের কোনো অপরাধ হলে তার দায়ভার তাকে নিতে হবে। এ মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরকেও আসামি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তার জামিনের কঠোর বিরোধিতা করছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি ৩৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৬২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত জালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানে এই টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছেন। আতিউর রহমান ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন অনৈতিক উপায়ে এই অর্থ আত্মসাত করেছেন। উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই রাতে ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরদিন ১১ জুলাই আদালত তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।