গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় সদর ও টুঙ্গিপাড়া থানায় নতুন করে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ এবং জেলা কারাগারের জেল সুপার। এই দুটি মামলায় মোট ১,৪৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন একটি মামলা করেন, যাতে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি নুরুল ইসলাম শেখ ও সাধারণ সম্পাদক ইফতি জামান পল্লবসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ১৫(৩) ধারায় দায়ের করা হয়। অন্যদিকে, জেলা কারাগারে সংঘটিত হামলার ঘটনায় জেল সুপার তানিয়া জামান একটি মামলা দায়ের করেন। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১,০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয় গোপালগঞ্জ সদর থানায়।
সদর থানার ওসি মীর মো. সাহেদুর রহমান এবং টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম এ দুটি মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। টুঙ্গিপাড়া থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই এনসিপির পদযাত্রাকে ঘিরে টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি চৌরঙ্গী মোড় ও আশপাশের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তাঘাট অবরোধ করা হয়। এতে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। মামলায় বলা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এনসিপির কর্মসূচি ব্যর্থ করতে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেয়। এতে জনগণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয় এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধনের চেষ্টাও করা হয়। এ ঘটনায় গোপালগঞ্জে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলো সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬০০ জনের নাম প্রকাশ করে এবং অজ্ঞাত ৯,২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
১৬ জুলাই থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন গ্রেপ্তার হন। জেলার পাঁচ থানার তথ্য অনুযায়ী, সদর থানা থেকে নতুন ১১ জনসহ ১১২ জন, কাশিয়ানী থানায় ৭৭ জন, মুকসুদপুরে ৮৮ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ২৯ জন এবং কোটালীপাড়ায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বুধবার এনসিপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ কামরুজ্জামান ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং রাতেই জারি হয় কারফিউ।