মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ ইরানের আঞ্চলিক জলসীমা, ওমান উপসাগরের দিকে এগোলে ইরান সেটিকে সতর্কবার্তা দিয়ে পেছন ফিরে যেতে বাধ্য করেছে বলে দাবি করেছে। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী এই ঘটনাকে ‘পেশাদার এবং নিরাপদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা মেহের। বুধবার (২৩ জুলাই) ঘটানো এই ঘটনার ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ করেছে ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এটি গত জুনে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। প্রেস টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানি হেলিকপ্টারটি যুদ্ধজাহাজটির ঠিক ওপরে দিয়ে উড়ে যায় এবং রেডিও বার্তায় স্পষ্টভাবে সতর্ক করে—ইরানের পর্যবেক্ষণাধীন জলসীমা থেকে দূরে সরে যেতে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, ‘মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ‘ইউএসএস ফিটজেরাল্ড’ উসকানিমূলকভাবে ইরানের মনিটর করা জলসীমার দিকে অগ্রসর হয়’। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, একটি হেলিকপ্টার মার্কিন যুদ্ধজাহাজের কাছে উড়ে যাচ্ছে এবং সেখানে থাকা এক ইরানি সৈন্য ইংরেজিতে রেডিওর মাধ্যমে যুদ্ধজাহাজটিকে দিক পরিবর্তনের জন্য সতর্ক করছেন। স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়। ইরানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজ হেলিকপ্টারটিকে হুমকি দেয়, যদি তা স্থান না ছাড়ে তবে তারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে একাধিকবার সতর্ক করার পর শেষ পর্যন্ত যুদ্ধজাহাজটি ওই এলাকা থেকে সরে যায়। অন্যদিকে, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ পেশাদার ও নিরাপদ, যা ইউএসএস ফিটজেরাল্ড-এর মিশনে কোনো প্রভাব ফেলেনি’।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে’। তারা আরও জানান, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটেছে এবং ইরানি হেলিকপ্টারটি ছিল এসএইচ-৩ ‘সি কিং’ মডেল। পটভূমিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলের পক্ষে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়, যার মধ্যে ফোর্ডো স্থাপনাটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়। সেই হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ‘এটি ছিল অসাধারণ সাফল্য, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে’। তবে বাস্তবে ইরান এখনো পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। বুধবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাব। তবে ইসরাইল যদি আবার আক্রমণ করে, আমরা প্রস্তুত’। সাথে তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আমি আশাবাদী নই’।