প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারের মুখে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়ার সামনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে দিয়েছিল। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং যতই ধ্রুবক হোক, ২১৫ রান তাড়া করা এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশকেই প্রশ্ন করুন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সামনে এই উচ্চমানের রান যেন কিছুই ছিল না, কারণ টিম ডেভিড একেবারে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন স্বাগতিক বোলারদের বিরুদ্ধে। মাত্র ৩৭ বলে তুলে নিয়েছেন তার প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। এই ইনিংসের মাধ্যমে ইতিহাসও গড়ে দিয়েছেন তিনি। এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ২৩ বল হাতে রেখে ২১৫ রানের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি দুই ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজও নিশ্চিত করে ফেলেছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা এক সময়ে কিছুটা কমে গিয়েছিল। তারা ২১৪ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ম্যাচের নবম ওভারেই। তখন থেকেই শুরু হয় ‘ডেভিড শো’। অভিষেক সিরিজ খেলতে নামা মিচেল ওয়েনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৪৬ বলে ১২৮ রান যোগ করেন তিনি।
ওয়েনের ইনিংসও বেশ ভালো ছিল, যদিও ডেভিডের সঙ্গেই তুলনা করলে তার পারফরম্যান্স একটু কম মনে হয়। ১৬ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে তিনি ৩৬ রান করেছেন। কিন্তু ডেভিড যখন ১১ ছক্কা ও ৩ চার হাঁকাচ্ছেন, তখন ওয়েনের ইনিংস তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। ডেভিড উইকেটে আসার সময় পাওয়ারপ্লে চলছিল, মিচেল মার্শ তখন বিদায় নিয়েছিলেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং জশ ইংলিসও ফিরে গেছেন সাজঘরে। স্কোরবোর্ডে ৬১ রান থাকলেও ২০০ এর বেশি লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে পাওয়ারপ্লেতে ৩ উইকেট হারানো মোটেও ভালো লক্ষণ ছিল না। ডেভিডের হাতে ব্যাট তুলে দেওয়ার পর তিনি ক্যামেরন গ্রিনকেও ফিরতে দেখেন। তখনও লক্ষ্য থেকে ১২৮ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া, হাতে ছিল মাত্র ৬৭ বল। এরপর ডেভিড যে ঝড় তুলেছেন, তা ৬৭ বলকে অনেক বেশি সময় মনে করিয়েছে। ওয়ার্নার পার্কের চারপাশে একের পর এক বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে গুদাকেশ মোতিকে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে, যিনি একাই ৫ ছক্কা ও ১ চার হজম করেছেন। বাকিরাও কম-বেশি মার খেলেন আকিল হোসেন, রস্টন চেজ ও রোমারিও শেফার্ড।
শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ডেভিড, যা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেয়। এই রেকর্ড আগে জশ ইংলিসের ছিল, যিনি গেল বছর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৩ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। মাত্র এক বছরও না পেরোতেই ডেভিড সে রেকর্ড নিজের করে নেন। ১৬ বলে করেছেন ফিফটি, যা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দ্রুত ফিফটির রেকর্ড। এই ইনিংস তার প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি হলেও, এর আগে শেই হোপের অভিষেক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিও ছিল স্মরণীয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৫৭ বলে ১০২ রান অপরাজিত খেলেন তিনি। তার ওপেনিং সঙ্গী ব্রেন্ডন কিং ৩৬ বলে ৬২ রান করে তাকে দুর্দান্ত সঙ্গ দেন, তারা একসাথে ১২৫ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন। তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১৪ রান সংগ্রহ করে, যা ইনিংসের শেষে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার টিম ডেভিডের ঝড়ে সেই আত্মবিশ্বাস শেষ হয়ে যায় এবং সিরিজও হাতছাড়া হয় আগেভাগেই।