‘হারাধনের দশটি ছেলে, রইল বাকি এক’- রিকি পন্টিংয়ের বক্তব্যকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি সম্প্রতি হারিয়েছেন তিনি। তাকে ছাড়িয়ে এখন দ্বিতীয় স্থানে আছেন জো রুট। আর রুটের সামনে এখন কেবল একজনই- ক্রিকেট দুনিয়ার মহাতারকা শচীন টেন্ডুলকার। গত রাতে রুটের ব্যাটিংয়ে শচীনের রেকর্ড খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে- কবে তিনি শচীনকে টপকে যাবেন? রুট বরাবরই ব্যক্তিগত রেকর্ড বা অর্জন নিয়ে ভাবেন না- বহুবার তিনি এমনটাই বলে এসেছেন। তবে এবার, ১৩,৪০৯ রান নিয়ে যখন শচীনের থেকে আর মাত্র আড়াই হাজার রান দূরে, তখন কি তার মনে কিছুটা হলেও ব্যক্তিগত মাইলফলকের চিন্তা উঁকি দিচ্ছে? ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সেই দিনটা যেন হয়ে উঠেছিল ইয়র্কশায়ারের সন্তান রুটের জন্য এক উৎসব। যখন অংশুল কম্বুজের বলটি পয়েন্ট অঞ্চলে ঠেলে ১২০ রানে পৌঁছে পন্টিংকে ছাড়িয়ে যান, তখন ছয় হাজার দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে তাকে হাততালি দেন। তিনি শেষ পর্যন্ত খেলেন ১৫০ রানের ইনিংস। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময়ও দর্শকদের অভিবাদনে সাড়া দেন তিনি। তবে এর আগেই তিনি তার ক্ষুধার পরিচয় দিয়েছেন- একসময় লেগ সাইডে বল না খেলার জন্য হয়তো নিজেকেই দুষেছেন। বাঁহাতে শ্যাডো ব্যাট করে সেটা বোঝালেন। পন্টিং যখন ক্যারিয়ার শেষ করেন, তখন নিজের রান কত হয়েছে তা জানতেনই না- উপহারে ছাপা সংখ্যাটি দেখে জেনেছিলেন। রুটও তেমনই, তার নজর দলের জয়েই বেশি।
গত বছর মুলতানে রুট বলেছিলেন, ‘আমি কোনো লক্ষ্য স্থির করি না, কারণ সেটা পূরণ না হলে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। এই খেলা এমনিতেই ব্যর্থতায় ভরা।’ সর্বোচ্চ রানের যাত্রায় রুট অনেক আগেই অ্যালিস্টার কুককে ছাড়িয়ে গেছেন। ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছানোর দুই বছরের মধ্যেই কুক অবসর নেন। রুট এখন ৩৪ বছরে পা রেখেছেন, কুকের থেকেও এক বছর বড়। তবে তিনি এখনই থেমে যেতে রাজি নন, ২০২৭ বিশ্বকাপে খেলতে চান। তার ফিটনেসও তাকে সেই পথেই এগিয়ে রাখছে। ২০১২ সালে নাগপুরে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর ইংল্যান্ডের ১৫৯টি টেস্টের মধ্যে ১৫৭টিতেই খেলেছেন রুট। যে দুটি মিস করেছেন, একটিতে দলে ছিলেন না, অন্যটি পিতৃত্বকালীন ছুটির কারণে। চোটের কারণে তিনি কখনও বাদ পড়েননি- ধারাবাহিকতার পেছনে তার ফিটনেসই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। আর তার ফর্ম? শেষ ৪০ টেস্টে রুটের ব্যাটিং গড় ৫৭.৭০, করেছেন ১৩টি সেঞ্চুরি। শেষ ৫০ ইনিংসে তুলেছেন ২,৫৫৬ রান। সুতরাং ১৫,৯২১ রানের শচীনের রেকর্ড যে খুব একটা দূরে নয়- এটাই বাস্তবতা। রুটের দরকার আর ২,৫১২ রান। প্রতি বছর ইংল্যান্ডের ১২-১৪টি টেস্ট ধরলে, ২০২৭ সালের মধ্যেই রুট হয়তো শচীনকে টপকে যাবেন।
শচীনের আরও একটি রেকর্ড এখন রুটের সামনে- ৫১ সেঞ্চুরি। রুট এখন ৩৮টিতে দাঁড়িয়ে। শেষ দুই টেস্টেই করেছেন সেঞ্চুরি। সামনে রয়েছেন রিকি পন্টিং (৪১ সেঞ্চুরি) ও জ্যাক ক্যালিস (৪৫ সেঞ্চুরি)। সেই পথে তিনি দ্রুত এগিয়ে চলেছেন। তবে তার একটি আক্ষেপ এখনও রয়ে গেছে- অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এখনও একটি সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। সামনের অ্যাশেজে সে সুযোগ আবার পাচ্ছেন। ইংলিশ ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি ইতোমধ্যে কিংবদন্তির কাতারে চলে গেছেন, তবে অস্ট্রেলিয়ায় একটি সেঞ্চুরি করে যদি সে খুঁতটুকুও ঘোচাতে পারেন, তাহলে আর কোনো প্রশ্নই থাকবে না। শচীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে এই আক্ষেপ ঘোচানোই হতে পারে রুটের পরবর্তী লক্ষ্য।