অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান আরও জোরদার করতে বলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বলেন, “ফিনিশ দ্য জব, দে ওয়ান্ট টু ডাই”। যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি বলেছিলেন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন এমন বক্তব্যে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্কটল্যান্ড সফরের আগে ট্রাম্প বলেন, ইসরাইলের উচিত এখনই “কাজটি শেষ করে ফেলা”, কারণ হামাস “আলোচনায় বসতে আন্তরিক নয়” এবং “তারা মরতে চায়”। ট্রাম্পের ভাষায়, “আমার মনে হয় ওরা মরতে চায়, এটা খুব দুঃখজনক, কিন্তু কাজটা শেষ করতেই হবে।” এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন গাজার মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জাতিসংঘ গাজাকে “জীবন্ত লাশের শহর” আখ্যা দিয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তবুও ট্রাম্পের মন্তব্যকে ইসরাইলের চলমান ২১ মাসব্যাপী সামরিক অভিযানে প্রত্যক্ষ সমর্থন হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ কাতারের দোহায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নেওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। তিনি অভিযোগ করেন, হামাসের মধ্যে আন্তরিকতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র অন্য উপায়ে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান পরিবর্তনে কাতার ও মিসরের কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন দেখা দিয়েছে, কারণ এই দুই দেশই গাজা যুদ্ধবিরতির মূল মধ্যস্থতাকারী। দোহায় আলোচনার একটি সূত্র বলেছে, “এটা এক রকম ভূমিকম্প, এখন আমরা আফটারশক সামাল দিচ্ছি।” যদিও মিসর ও কাতার এই অচলাবস্থাকে জটিল বাস্তবতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে ইসরাইলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সিএনএন-কে বলেন, “আলোচনা একেবারে ভেঙে পড়েনি” এবং এখনো একটি সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, হামাস বাস্তবতা বুঝে ফিরে আসবে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, হামাসের কাছে থাকা অনেক জিম্মি হয় মুক্তি পেয়েছে অথবা মারা গেছে, তাই তাদের পক্ষে আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করা আর সম্ভব হচ্ছে না। তার ভাষায়, “তারা কখনোই চুক্তি করতে চায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরাইলের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, সব কিছু শেষ করতে হবে... ওদের সরিয়ে ফেলো।” এছাড়া, নেতানিয়াহুর প্রতি অসন্তুষ্টির ইঙ্গিতও দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাম্প্রতিক আলাপ “হতাশাজনক” ছিল, যদিও বিস্তারিত কিছু বলেননি। যেখানে মাসখানেক আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যেই চুক্তি হতে পারে”, সেখানে এখন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা থেকে সরে এসে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সিএনএন-কে বলেন, ট্রাম্প ও উইটকফ “কৌশলগতভাবে অনেক দক্ষ” এবং তারা এই কূটনৈতিক খেলায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে ভালোভাবে চেনেন। তিনি সফলতার আশা প্রকাশ করলেও কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করতে রাজি হননি। নেতানিয়াহুও বলেছেন, ইসরাইল নতুন কৌশলের কথা ভাবছে যার লক্ষ্য হবে হামাসের শাসনের অবসান ও জিম্মিদের মুক্তি। যদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি, তবে গাজায় সামরিক অভিযানের প্রতিশ্রুতি পুনরায় দিয়েছেন। গাজা বর্তমানে চরম ধ্বংস, গৃহহীনতা এবং খাদ্য সংকটে ভোগা এক বিপর্যস্ত ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার ও সাহায্য সংস্থাগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যুদ্ধকৌশলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য হয়তো হামাসকে চাপে রাখতে একটি কৌশল-তবে এটাও হতে পারে যে, কূটনীতির জায়গা এখন সেনাবাহিনীর নিচে চাপা পড়ে গেছে।