জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিভাগের প্রধান টম ফ্লেচার ইসরায়েলের প্রতি একটি স্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে তিনি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এবং তার কর্মীদের বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার যে অভিযোগগুলো উঠেছে, সেগুলোর যথাযথ, স্পষ্ট ও প্রমাণসম্বলিত তথ্য তাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এই তথ্য শুক্রবার (২৫ জুলাই) রয়টার্সের হাতে আসা একটি আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে জানা গেছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। গত বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে, ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি ড্যানন আক্রমণাত্মক ভাষায় দাবি করেন যে, ফ্লেচার এবং ওসিএইচএর কর্মীরা নিরপেক্ষ থেকে সরে গেছেন এবং তারা হামাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ড্যাননের বক্তব্য অনুযায়ী, ওসিএইচএ’র শত শত কর্মীর নিরাপত্তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তাদের ভিসার মেয়াদ এক মাসের জন্য সীমিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার ওসিএইচএ’র অভ্যন্তরে হামাস-সম্পৃক্ততার স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে’, তবে এই দাবি করার পরও ড্যানন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি, যা অনেক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকের মাঝে সন্দেহ ও প্রশ্ন তোলে।
এই অভিযোগের উত্তরে, পরদিন বৃহস্পতিবার টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো একটি চিঠিতে জানান, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ তাঁর ক্যারিয়ারে আগেও কখনো ওঠেনি। তিনি এ অভিযোগগুলোকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলছেন, এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে অফিসের কর্মীদের নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্লেচার চিঠিতে আরও যোগ করেছেন, ‘আমি আশা করি, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যেসব প্রমাণ পেয়েছে, তা অবিলম্বে নিরাপত্তা পরিষদের সাথে বিস্তারিতভাবে শেয়ার করবে যেন এই বিষয়টি স্বচ্ছতা পায় এবং ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।’ বিশ্বব্যাপী চলমান সংঘাত অঞ্চলে ওসিএইচএ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে এবং সশস্ত্র সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। ফ্লেচার এরই মধ্যে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মানবিক নীতিমালা অনুসরণ করা অপরিহার্য এবং প্রত্যেক পক্ষের দায়িত্ব এই নীতিমালা মানা।
ফ্লেচার আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ভালভাবেই জানে যে, হামাসের সঙ্গে ওসিএইচএ’র সংযোগই এমন একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে যার মাধ্যমে গাজায় বন্দী রাখা জিম্মিদের মুক্তিতে সহায়তা করা সম্ভব হয়েছে।’ এর মাধ্যমে মানবিক দিক থেকে কিছুটা হলেও সঙ্কটের সমাধান এসেছে। এই ঘটনাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, ইসরায়েলের অভিযোগগুলো প্রমাণ সাপেক্ষ না হওয়ায় এটি জাতিসংঘের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে। অন্যদিকে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পরিষ্কার বার্তা দেওয়ার জন্য ফ্লেচারের এই প্রমাণ-দাখিলের অনুরোধ মানবিক সহায়তার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, গাজার জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা দারুণ চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক ও সামরিক চাপের মধ্যেও ওসিএইচএ টিম বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে তাদের নিরপেক্ষতা ও নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই এই প্রকার অভিযোগ কর্মীদের কাজকে জটিল করে তুলছে এবং সেগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই করা অত্যাবশ্যক। ফ্লেচারের এই আহ্বান একটি স্পষ্ট সংকেত দেয় যে, মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রকে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ফেলা চলবে না এবং এই ধরনের গুরুতর অভিযোগের পেছনে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে, অন্যথায় তা কার্যক্রমকে বিপর্যস্ত করতে পারে ও মানবিক সেবায় বাধা সৃষ্টি করবে।