২০ বছর পর আবার দেখা মিলেছে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সাপ বার্বাডোস থ্রেডের। সর্বশেষ দুই দশক আগে এই প্রজাতির সাপ দেখা গিয়েছিল। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ক্ষুদ্র সাপ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই সাপটির নাম বার্বাডোস থ্রেডস্নেক, যা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সাপ হিসেবে পরিচিত। ২০ বছর আগে এটি শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল, তবে সম্প্রতি সৌভাগ্যবশত আবারও এই প্রজাতির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গত মার্চ মাসে দ্বীপটিতে একটি পরিবেশগত জরিপ চালানোর সময় এক টুকরো পাথরের নিচে এই সাপটি আবিষ্কৃত হয়। জরিপটি পরিচালনা করে বার্বাডোসের পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং অলাভজনক সংস্থা রি:ওয়ার্ল্ড। এই সাপটির দৈর্ঘ্য পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় প্রায় ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় এবং এটি অত্যন্ত সরু আকৃতির। ‘বিজ্ঞান থেকে হারিয়ে যাওয়া’ চার হাজার ৮০০টি উদ্ভিদ, প্রাণী ও ছত্রাকের তালিকায় এই সাপটির নামও রয়েছে। এই সাপের বিরলতা গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। জরিপ দলের সদস্য ও বার্বাডোস পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কনর ব্লেডস বলেন, “যদি এই সাপের সংখ্যা খুব কম হয়, তবে সঙ্গী খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। বিশেষ করে যদি তাদের আবাসস্থল ধ্বংসের মুখে পড়ে।” রি:ওয়ার্ল্ড সংস্থায় যুক্ত ব্লেডস ও জাস্টিন স্প্রিঙ্গার দীর্ঘদিন ধরে থ্রেডস্নেকসহ বিলুপ্তপ্রায় সাপদের নিয়ে কাজ করছেন।
জরিপ চলাকালে গত মার্চে স্প্রিঙ্গার মজা করে ব্লেডসকে বলেছিলেন, “আমার মনে হচ্ছে আমি থ্রেড সাপের গন্ধ পাচ্ছি।” এরপর তারা একটি পাথর সরিয়ে এর নিচে এই বিরল সাপটিকে খুঁজে পান। স্প্রিঙ্গার বলেন, “একটি বিষয় বহুবার খুঁজেও না পেলে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা হঠাৎ সামনে চলে এলে বড় রকমের চমক লাগে।” সাপটি উদ্ধার করে ব্লেডস ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানকার মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি সেই বহুল খোঁজার সাপ, থ্রেডস্নেক। ১৮৮৯ সালে প্রথমবারের মতো বার্বাডোসে এই সাপ দেখা গিয়েছিল। পরে মাঝে মাঝে এটি দেখা গেলেও, এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। থ্রেডস্নেক যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে এবং স্ত্রী সাপ কেবলমাত্র একটি ডিম পাড়ে। অন্যদিকে, কিছু সাপ প্রজাতি যৌন মিলন ছাড়াও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। গার্ডিয়ানের তথ্য মতে, বার্বাডোসে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বসতি স্থাপন হয়েছিল। তবে কৃষিকাজের প্রয়োজনে দ্বীপটির প্রায় ৯৮ শতাংশ বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দ্বীপটির প্রাণীজগত আজ হুমকির মুখে। গবেষকদের মতে, আবাসস্থল হারানো ও আগ্রাসী প্রজাতির কারণে থ্রেড সাপ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। স্প্রিঙ্গার বলেন, “থ্রেড সাপের পুনরাবিষ্কার আমাদের বার্তা দেয় যে বার্বাডোসের বনাঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এটা শুধু থ্রেড সাপ নয়, বরং অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ ও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্যও জরুরি।”