জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন যে বর্তমান সরকার, যেটি তিনি ‘পতিত হাসিনা সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, সমাজকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ও তার শাসনব্যবস্থা সংস্কার না করলে দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা সম্ভব নয়। গত এক বছরে হওয়া গণ অভ্যুত্থানের পরও দেশের সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এখনো চলমান, যা দেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য গভীর হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। শনিবার (২৭ জুলাই) রাতে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা চৌরাস্তা মোড়ে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে নাহিদ ইসলাম এসব বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “বর্তমান পতিত হাসিনা সরকারের সংবিধান ও সরকার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে নতুন ও সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা গঠন করা ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না।” তার ভাষায়, এই অঞ্চলের মানুষ রাষ্ট্রপতি পেয়েছিল, কিন্তু তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সেই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করে একনায়কশাসন প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
নাহিদের বক্তব্যে উঠে আসে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের হতাশা ও অসন্তোষ। তিনি বলেন, “সরকার দীর্ঘদিন ধরে জনগণের স্বার্থের কথা না ভেবে নিজেদের দুর্নীতি ও স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যস্ত। একসময় এই দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণ অভ্যুত্থান হয়েছিল, কিন্তু এখনো সেই অধিকার আদায় হয়নি।” এ ছাড়া, পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “দেশের দুর্নীতিবাজদের দিন ফুরিয়ে আসছে। যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নিজেদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়, তবে দুর্নীতি চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে নিজেদের পরিবারের মধ্য থেকে। এমনকি নিজের বাবাও যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।” হাসনাতের এই মন্তব্যে বোঝা যায়, দলটি দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।
নাহিদ ও এনসিপির নেতারা এই সমাবেশে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার পদ্ধতি ও কার্যক্রমকে কঠোর সমালোচনা করেন এবং দেশের মানুষের স্বার্থে নতুন সরকার ব্যবস্থা গঠনের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তারা দাবি করেন, দেশের সংবিধান ও সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার আনা প্রয়োজন, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করবে এবং দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। নাহিদের এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এনসিপির মতো দলের এই ধরনের আক্রোশপূর্ণ বক্তব্য আগামীতে নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তবে পরিস্থিতি কিভাবে এগোবে তা সময়ের অপেক্ষা।