নিউইয়র্কে প্রবাসী পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার আফিয়া সিদ্দিকিকে ‘পাকিস্তানের মেয়ে’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তার মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকার আন্তরিক, নিরলস ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি এখনো একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি জানান, আফিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। আফিয়ার কারাবন্দিত্বকে মানবিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে দার বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই বিষয়টি বারবার আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘ডা. আফিয়া সিদ্দিকি আমাদের জাতির কন্যা। সরকার এখনো তার বিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়।’ অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পাকিস্তানকে দেউলিয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে। তাঁর মতে, পিটিআই সরকার যদি আরও ছয় মাস ক্ষমতায় থাকত, তাহলে পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যেত। তাই তাদের সরকার থেকে সরাতে আনা অনাস্থা প্রস্তাব কঠিন হলেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।
বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। মুদ্রাস্ফীতি কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোও এই অগ্রগতি স্বীকার করছে এবং পাকিস্তানকে জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে দেখতে সরকারের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। প্রবাসী পাকিস্তানিদের ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দার বলেন, তাদের বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে এবং সরকারি জটিলতা দূর করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগে বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তানের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল, তবে এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে পাকিস্তান আবার সক্রিয়ভাবে উপস্থিত। তিনি মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিওর সঙ্গে নিজের সাম্প্রতিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে পাকিস্তান আগ্রহী, তবে এই সম্পর্ক যেন চীনের সঙ্গে কৌশলগত বন্ধুত্বের ক্ষতি না করে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আফগানিস্তানকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হলে তা কোনোভাবে সহ্য করা হবে না। ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, তবে উসকানি এলে উপযুক্ত জবাব দিতেও প্রস্তুত।’ তিনি জানান, পেহেলগাম হামলার বিষয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে এবং এই ঘটনায় ভারতের প্রচারণার জবাবে বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব আবার পাকিস্তান পাওয়ায় তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের গ্রহণযোগ্যতা এবং আস্থা নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।