মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের নিবন্ধিত সমাজসেবা ক্লাব "লক্ষ্মীপুর উদয়ন সংঘ"-এর কবরস্থানের জমি গোপনে বিক্রি করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ক্লাবের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক মো: টিপু সুলতানসহ একটি অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে। বিক্রি করা জমির একাংশে এখনও শিশুদের কবর রয়েছে- এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর বিষয়টি শুধু আইন বা অনিয়ম নয়, একটি ধর্মীয় ও মানবিক অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। স্থানীয় মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও শোকাহত। তাদের প্রশ্ন- একটি কবরস্থান কীভাবে গোয়ালঘরে পরিণত হলো? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। সরকারি জমি, কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তর ‘নীরব দর্শক’! সংগঠনটি সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত। তাই এই জমির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা সরকারি নীতিমালার আওতাধীন। অথচ অনুমতি ছাড়াই সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্লাবের জমি বিক্রি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন- সমাজসেবা অধিদপ্তরের নীরবতা এ ঘটনায় বড় প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। একাধিক অভিযোগ ও নথিপত্র জমা দেওয়ার পরেও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিভাগ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে- তদন্ত প্রহসনে পরিণত হচ্ছে না তো? স্থানীয় সমাজকর্মী ও লক্ষীপুর গ্রামবাসীর পক্ষে অভিযোগকারী সৈয়দ আলমগীর হোসেন জানান, “জমি বিক্রির সময় কোনো সদস্যকে জানানো হয়নি। জাল রেজুলেশন বানিয়ে সভাপতি-সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই ‘আম মোক্তার’ হয়ে দলিলে স্বাক্ষর করেন। সরকারি কবরস্থানকে ধানি জমি বলে রেজিস্ট্রি করানো হয়েছে, যা ভয়ানক অপরাধ।” ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য, জমির প্রকৃত ক্রেতা মোক্তার হোসেন বলেন, “আমি জমি কিনেছি ১৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায়। সভাপতি,সহ- সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান পুরো টাকা নিয়েছেন।” সহ-সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঠাকুর বলেন, “আমি বুঝিনি সমাজকল্যাণ ক্লাবের জমি বিক্রি করা যায় না। আমি ভুল করেছি আমি একজন শিক্ষক মানুষ এই অপরাধে আমার পেনশন আটকে যায় কিনা চিন্তায় আছি।” সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, “জানি না এই অপরাধে কী শাস্তি হবে।”
কথিত রেজুলেশন ও টাকার গরমিল, আলোচিত রেজুলেশনটি তৈরি করা হয় ১৫ জানুয়ারি ২০২৫-এ, যেটি জাল বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। দলিলে ৫ লক্ষ টাকার বিক্রয়মূল্য দেখালেও আসল লেনদেন হয় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি, যার মধ্যে ১০ লক্ষ টাকার কোনও বৈধ হদিস নেই। সমাজসেবা অফিস জানে, কিন্তু.......! মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: আব্দুর রব স্বীকার করেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জেলা উপ- পরিচালক কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত করেছি এবং তদন্তের রিপোর্ট উপ- পরিচালক মহোদয় দপ্তরের জমা দেওয়া হয়েছে তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই তদন্ত ‘কচ্ছপগতির’ হয়ে গেছে। কার্যকর পদক্ষেপের কোনও লক্ষণ নেই। এলাকাবাসীর প্রশ্ন- সরকারি সম্পত্তি বিক্রির দায় কি সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঘাড়েই বর্তাবে না? জনগণের দাবি: জড়িতদের দ্রুত বিচার ও জমি ফেরত, গ্রামবাসীরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, অবৈধ বিক্রয় বাতিল, ক্লাবের জমি পুনরুদ্ধার এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। তাদের ভাষায়, “এটি শুধু আর্থিক নয়, ধর্মীয় অনুভূতির চরম অবমাননা। সমাজসেবার নামে যে বিশ্বাস ভাঙা হয়েছে, তা ক্ষমার অযোগ্য।”
সুব্রত সরকার
মহম্মদপুর, মাগুরা
মোবাইল: ০১৭১৩-৯০৫৩৩৮.