ভারতের সংসদে মঙ্গলবারের বিতর্কে তীব্র বাকবিতণ্ডা ও কটাক্ষের মধ্যে দিয়ে বিজেপি সরকার দাবি করে, সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতে তারা পাকিস্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে। তবে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘কাপুরুষ’ বলে অভিযুক্ত করেন। লোকসভায় বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একজন প্রধানমন্ত্রী চাই না, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বলতে সাহস করেন না।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘যুদ্ধবিরতি’ সংক্রান্ত দাবির প্রেক্ষিতে মোদি সরকারের অবস্থান নিয়েই তিনি এ মন্তব্য করেন। রাহুলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদি পাকিস্তানকে সরাসরি আক্রমণ না করে সেনা ও বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের শুরুতেই সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে নিষেধ করেছিলেন। বুধবার (৩০ জুলাই) দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি ২২ এপ্রিল পেহেলগামে নিহত ২৬ পর্যটকের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কৃতিত্ব নিজে দাবি করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জন নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য।
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ এই সাফল্যের প্রশংসা করলেও সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, নিহতরা কি সত্যিই পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল? সরকার যদিও এই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে সফলতার দাবি করেছে, তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে হিন্দিতে বলেন, ‘বিরোধীরা জানতে চাইছে আজাদ কাশ্মীর উদ্ধার করা হয়নি কেন-তারা এই প্রশ্ন আর কাকে করবে?’ মোদি বলেন, পাকিস্তানের ‘পারমাণবিক হুমকি’র মুখোশ উন্মোচন করেছে ভারত এবং প্রমাণ করেছে যে এখন তারা ভয় পায় না। তিনি দাবি করেন, পেহেলগাম হামলার মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যেই ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত হানে। পাকিস্তানের পরমাণু হুমকি সত্ত্বেও ভারত থেমে থাকেনি। তার ভাষায়, পাকিস্তান ভারতীয় পরিকল্পনার আভাস পাওয়ার পরই পারমাণবিক হুমকি দিতে শুরু করেছিল, কিন্তু ভারত হামলা চালানোর সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
তিনি বলেন, ‘ভারত এখন নিজের নিয়মে প্রতিক্রিয়া জানায়; গুলির বদলে কামান চলে।’ তার দাবি, এতে পাকিস্তানের প্রতিরোধের সীমা স্পষ্ট হয়েছে এবং ভারতের কৌশলগত অবস্থানে বড় পরিবর্তন এসেছে। জাতিসংঘে মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন, যদিও ভারতের পক্ষে কত দেশ ছিল তা জানাননি। রাহুল গান্ধী বলেন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনেক দেশ নিন্দা জানালেও পেহেলগাম হামলার পর কেউ পাকিস্তানকে দায়ী করেনি। মোদি বলেন, কোনও দেশের নেতা তাকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে নিরুৎসাহ করেননি। তিনি জানান, অভিযানের সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাকে একাধিকবার ফোন করেছিলেন, কিন্তু তিনি তখন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন যে তিনিই ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ করেছিলেন। যদি তিনি মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে মোদি কেন মুখ খোলেন না?’ মোদি বলেন, ‘অপারেশন সিদুঁর’-এর মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে এবং দেশীয় অস্ত্রের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারাই যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সিন্ধু পানি চুক্তিকে মোদি কৃষকদের সঙ্গে অবিচার বলে অভিহিত করে বলেন, ‘রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।’ তবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বিমানযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর ক্ষতির বিষয়ে কিছুই বলেননি, যা বিরোধী নেতারা সংসদে জানতে চেয়েছিলেন-বিশেষ করে কত রাফাল ও অন্যান্য যুদ্ধবিমান হারানো হয়েছে, সে বিষয়ে। রাহুল গান্ধী বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজেই সংসদে বলেছেন, সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যেই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানাতে বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বলেছিলেন, সামরিক লক্ষ্যে হামলা করা যাবে না; কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি করা যাবে না।’ রাহুল অভিযোগ করেন, ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন শিবকুমার বলেছেন যে, রাজনৈতিক নেতাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা চালানো যায়নি, যার ফলে কিছু বিমান হারানো হয়েছে। তার দাবি, ‘আপনারা সৈনিকদের হাত পিছমোড়া করে পাঠিয়েছেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদে তা স্বীকার করেছেন।’