পটুয়াখালী জেলা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পৌর এলাকায় ১৭ হাজার ১৮৮ মিটার দীর্ঘ ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ‘কোস্টাল টাউন ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স’ প্রকল্পের আওতায় ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর, ফলে শহরবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা গেছে, বৃষ্টি বা জোয়ারের সময় পানি খুব দ্রুত পটুয়াখালী শহরে প্রবেশ করলেও, তা নেমে যেতে সময় লাগে অনেক বেশি। এতে দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকায় শহরবাসী দুর্ভোগে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় পৌরসভা জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নির্মাণকাজ শুরু করে। প্রকল্পটি ১৮ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা সম্পন্ন না হওয়ায় জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার তত্ত্বাবধানে শহরের বিভিন্ন স্থানে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। কিছু এলাকায় কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, আবার কিছু জায়গায় ড্রেনের কাজ শুরুর পর তা মাঝপথে ফেলে রাখা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণের জন্য অনেক জায়গায় রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে, যা ওইসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
সম্পূর্ণ হওয়া ড্রেনগুলোর সঙ্গে আশপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমন্বয় না থাকায় পানি ঠিকভাবে বের হতে পারছে না। পুরোনো ড্রেনের সঙ্গে নতুন ড্রেন যুক্ত না হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেক ড্রেনে আবর্জনা জমে থাকায় সেগুলোও পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত শুক্রবার থেকে দুই দিনের মধ্যে শহরে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি কবরস্থান, বাস টার্মিনাল, পুরান বাজার, নিউমার্কেট, চরপাড়া, মুসলিমপাড়া, চকবাজারসহ প্রায় ৫০টি এলাকায় দেড় থেকে দুই ফুট পানি জমে আছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। শশ্মানঘাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের স্লইজগেটটি অকার্যকর থাকায় এলাকাটিতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি মিলে কবরস্থান ডুবে যায়, আর ভাটার সময় পানি সরে যায়। নদীর সঙ্গে ড্রেন সংযুক্ত থাকায় সহজেই নদীর পানি কবরস্থানে প্রবেশ করে।
পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাক আহম্মেদ পিনু অভিযোগ করেন, পরিকল্পনাহীনভাবে ড্রেন নির্মাণের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, নদীর পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শহরের জমে থাকা পানি সরাতে হলে পাম্পিং পদ্ধতির ব্যবহার জরুরি। পটুয়াখালী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান বলেন, পৌরসভা নাগরিক সুবিধার বিষয়টি উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় উন্নয়ন কাজ করায় অর্থের অপচয় হয়েছে। ফলে ৯৬ কোটি টাকার ড্রেনেজ প্রকল্প জনসাধারণের উপকারে আসছে না। তিনি আরও জানান, প্রকল্পে ড্রেন-টু-ড্রেন সংযোগের যথাযথ ব্যবস্থা রাখা হয়নি, আবার অনেক এলাকায় রাস্তা কেটে ফেলে রাখায় পানি স্বাভাবিকভাবে নদীতে নামতে পারছে না। পটুয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক মো. জুয়েল রানা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পৌর শশ্মানঘাটের একটি স্লইজগেট দীর্ঘদিন ধরে অকেজো ছিল এবং কালিকাপুর এলাকায় একটি খালে বাঁধ দিয়ে কালভার্ট নির্মাণ করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।