গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পর, ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে সরকার গঠনের পর থেকে মন্ত্রণালয় আইন সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের মাধ্যমে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, অভিযুক্তদের অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ এখন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছভাবে হচ্ছে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে যুগোপযোগী সংস্কার এনে ন্যায়বিচার দ্রুততর ও জবাবদিহিমূলক হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সময়সীমা নির্ধারণ, সাক্ষী সুরক্ষা ও পৃথক ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় ছাড়পত্র দিয়ে বিদেশ থেকেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করা যাবে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে পুরাতন নিপীড়নমূলক ধারাগুলো বাতিল করা হয়েছে, আর বিবাহ নিবন্ধনে জেন্ডার বৈষম্যমূলক বিধান সরিয়ে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের পদসৃজন ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি দেশের সব আদালতে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে বিচারপ্রার্থীরা তাদের মামলার অবস্থা সহজে জানতে পারছেন। আদালতের কর্মচারী নিয়োগের জন্য স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব নেওয়া হচ্ছে, আর সাবরেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার ওপর অতীতে সংঘটিত অপরাধ মনিটর করার জন্য বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করতে অনলাইনে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে এবং ই-ফ্যামিলি কোর্ট প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রের অর্ধেকই এখন ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হচ্ছে, আর অনলাইনে বেইলবন্ড জমা দেওয়ার সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে জেলার কমিটি ও আইন বিভাগ মিলে ১৫ হাজারের বেশি মামলা বাতিলের সুপারিশ দিয়েছে। এছাড়া সাইবার আইনের ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স মামলা এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের ৭৫২টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, ফলে অনেক রাজনীতিক, কর্মী ও মতপ্রকাশকারী হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দৈনন্দিন কার্যক্রমেও আইন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি দ্বিগুণ হয়েছে; এক বছরে মন্ত্রীপর্যায়ে নিষ্পত্তি করা নথির সংখ্যা বেড়ে ১২৮৩ হয়েছে। আইনি মতামত প্রদানে ও ডকুমেন্ট সত্যায়নে ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষণীয়। নতুন করে গঠিত সংস্কার কমিশন ও তদন্ত কমিশনগুলোকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এবং প্রথমবারের মতো বিধিমালা ও প্রবিধানগুলো কোডিফাই করার কাজ শুরু হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগকৃত আইন কর্মকর্তাদের পালিয়ে যাওয়া পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আইন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে আদালত ও ট্রাইব্যুনালের আইন কর্মী শক্তিশালী করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪৮৯০ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা ও ২৭৪ জন অ্যাটর্নি নিয়োগ পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রয়োজনীয় বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগসহ দেশের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগেও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেছে মন্ত্রণালয়। এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে ন্যায়বিচার ও শাসনতন্ত্রকে অধিকতর শক্তিশালী করেছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।