বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে সোনার দিকে ঝুঁকছেন, যার প্রভাব ইতোমধ্যেই সোনার বাজারে স্পষ্টভাবে পড়েছে। এর ফলে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। মঙ্গলবার ভোরে স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ৩,৫০৮.৫০ ডলার পর্যন্ত উঠে গেছে, যা এই বছরের শুরু থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। এই তথ্য মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উত্থান শুধুমাত্র বাজারের স্বাভাবিক চাহিদা-বৃদ্ধি নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব। মার্কিন নীতি ও বৈশ্বিক প্রভাব, সোনার এই উল্লেখযোগ্য উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় প্রভাব হিসেবে বিশ্লেষকরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও সিদ্ধান্তগুলিকে আখ্যায়িত করছেন। সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন দেশের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক চাপের সম্ভাবনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো নিরাপদ সম্পদে ঝুঁকছেন।
বুলিয়নভল্টের গবেষণা পরিচালক অ্যাড্রিয়ান অ্যাশ বিবিসিকে বলেন, “গত কয়েক মাসে সোনার মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ ট্রাম্পের নীতি। তিনি যেভাবে বিশ্ব বাণিজ্য ও ভূরাজনীতিতে প্রভাব ফেলছেন, তা সোনাকে বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ এবং আকর্ষণীয় করেছে।” অন্যদিকে হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনের বিশ্লেষক ডেরেন নাথান মনে করেন, ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা সোনা, রূপা এবং অন্যান্য নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন, যাতে অনিশ্চয়তার প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। বৈশ্বিক উদ্বেগ, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে সতর্ক করে জানিয়েছেন, যদি ফেডারেল রিজার্ভ রাজনৈতিক চাপের প্রভাবে নীতি নির্ধারণ করে, তবে তার প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হতে পারে। তিনি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছেন যে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চীন ও ভারতের চাহিদা, সাধারণত সোনার দাম বেড়ে গেলে চীন ও ভারতের বাজারে ক্রেতারা কমে যান এবং গয়না কেনার প্রবণতা হ্রাস পায়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। চীন ও ভারতের ক্রেতারা গয়নার পরিবর্তে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সোনার দিকে নজর দিচ্ছেন। বিশেষ করে তারা সোনার বার, মুদ্রা ও অন্যান্য বিনিয়োগ সোনার পণ্য কিনছেন, যা আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা আরও বাড়াচ্ছে এবং সোনার মূল্যকে উপরের দিকে ধাক্কা দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন নীতির প্রভাব, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা ও চীনা-ভারতীয় ক্রেতাদের বিনিয়োগের আগ্রহ—all মিলিয়ে সোনার দাম আরও কিছু সময় ধরে উচ্চ পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এই পরিস্থিতিকে নিজেদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যেখানে নিরাপদ এবং লাভজনক সম্পদে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।