জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্যার এ এফ রহমান হলের সাহিত্য সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার প্রসঙ্গ থাকলেও, তা ছাত্রশিবির সমর্থিত ৩৬ দফা ইশতেহারেই স্থান পেয়েছে; অথচ ছাত্রদলের ১০ দফার মধ্যে সাম্য হত্যার উল্লেখ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫ ঘিরে বিভিন্ন প্যানেলের ইশতেহার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই পার্থক্য চোখে পড়ে। শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ইশতেহারের দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে-ডাকসুতে নির্বাচিত হলে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনি শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি সাম্য, মোফাজ্জল ও আবু বকর হত্যাসহ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংঘটিত সব নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারও নিশ্চিত করা হবে।
অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদলের ১০ দফা ইশতেহারে উঠে এসেছে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিমা, পরিবহণ ব্যবস্থা সহজীকরণ, প্রশাসনিক সেবা হয়রানিমুক্ত করা, তরুণদের গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্তকরণ, সাইবার সিকিউরিটি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সেল গঠন, পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস, নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন আয়োজন এবং সেমিনার-সিম্পোজিয়াম চালু রাখার মতো বিষয়গুলো। শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ তাদের ইশতেহারের ৩৬ দফা সাজিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক ৩৬ দিনের স্মরণে। শুরুতেই তারা ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলো আলাদা করে চিহ্নিত করেছেন। প্যানেলের প্রার্থীরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি দফা বাস্তবায়নের জন্য তাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত রয়েছে। কোন দফা কখন এবং কীভাবে কার্যকর করা হবে তার রোডম্যাপও তারা তৈরি করেছেন। এমনকি তাদের ওয়েবসাইটে এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রচলিত ইশতেহারের বাইরে গিয়ে তারা রেখেছেন কিছু ব্যতিক্রমী প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে রয়েছে-ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠন, ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় উদ্যোগ, শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজরসহ আরও কিছু বিষয়। প্যানেলটির এক প্রার্থী বলেন, নিজস্ব সংস্কৃতিনির্ভর এ ইশতেহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বে শুধু মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। এককেন্দ্রীক সংস্কৃতির কারণে শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতায় ভুগেছে। ব্যক্তির সংস্কৃতি ও বিশ্বাসই তার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে শিক্ষাঙ্গনসহ সারাদেশে উত্তাপ ছড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা শুধু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয়, বাস্তবায়ন দেখতে চান। অন্যদিকে প্রার্থীরা আশ্বস্ত করেছেন-বাস্তবায়নযোগ্য ইশতেহারগুলোকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।