আগামী নির্বাচনে নির্বাচনী কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ব্যবহারের জন্য ১৯৫টি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি মডেলের জিপ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনার অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জিপের দাম নির্ধারিত হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, আর প্রতিটি মাইক্রোবাসের দাম ধরা হয়েছে ৫২ লাখ টাকা। এইভাবে মোট ২২০টি যানবাহন কিনতে সরকারকে ব্যয় করতে হবে ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যানবাহন অধিদপ্তরের জন্য মোটরযান ক্রয় খাতে ৩২৮ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে ২৮০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচের জন্য অন্য খাতের অর্থ ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের শর্তে বলা হয়েছে, নতুন কেনা জিপগুলো প্রাধিকারভুক্ত হবে এবং প্রতিস্থাপক হিসেবে কেনা জিপ ও মাইক্রোবাসগুলোকে অকেজো ঘোষণা সংক্রান্ত বিআরটিএর পরিদর্শক দলের অনুমোদনের অনুলিপি অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২১ আগস্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ২৮০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠায়। প্রস্তাবে বলা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জয়ী সরকারের মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি প্রয়োজন। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর, যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি কিনবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারী গাড়িগুলোর অধিকাংশ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা এবং মেরামত করতে গেলে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তাই ভবিষ্যতের নির্বাচিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কার্যক্রম নির্বাহে, যেমন নির্বাচনী এলাকা সফর বা উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন, এই গাড়িগুলো যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করবে না।
অর্থ বিভাগের সম্প্রতি দেওয়া অনুমোদনের পর সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে এই গাড়ি ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। চলতি অর্থবছরে যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের জন্য একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছিল, যা মূলত সব নতুন যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী কাজের প্রয়োজন এবং প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তাদের ব্যবহারযোগ্য গাড়ির অনুপস্থিতির কারণে এই শর্ত উপেক্ষা করা হয়েছে। গত ৮ জুলাই জারি হওয়া ওই পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় প্রাধিকারভুক্ত সরকারি কর্মকর্তার ব্যবহারের জন্য ১০ বছরের বেশি পুরানো গাড়ি ব্যবহারের অযোগ্য হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। তবে সরকারের পরিবহন পুল অনুযায়ী, গত সরকারের মন্ত্রীদের গাড়ি ইতিমধ্যেই ৯ বছরের পুরানো।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আগামী মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রীদের বর্তমান গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে নির্বাচনী কাজে নির্বিঘ্নভাবে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়।