সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে প্রবাসী সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ছোট ছেলে আটক হয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত এক ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের প্রিজনভ্যানে তোলা হচ্ছে। এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভ্রান্তভাবে বিশ্বাস করেছেন যে, আটক ব্যক্তি পিনাকীর ছেলে। ফ্যাক্টচেক ও বিস্তারিত তথ্য,রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিনাকী ভট্টাচার্যের ছোট ছেলে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটিতে দেখা ব্যক্তি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শফিউল আলম লাট্টুর ছেলে মোস্তাসেরুল আলম অনিন্দ্য। অনিন্দ্যকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করেছে। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হলেও ভুলভাবে দাবি করা হচ্ছে যে এটি পিনাকীর ছেলের। ভিডিওটির উৎস নির্ধারণ করতে অনুসন্ধান করা হলে দেখা যায়, ভিডিওতে দেশের ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম দেশ টেলিভিশনের লোগো আছে। টেলিভিশনের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে ১৮ আগস্ট প্রচারিত একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘পিনাকী-ওসমান হাদির কথা শুনতে বললেন সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার অনিন্দ্য’, যদিও এখানে আটক ব্যক্তির পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
পরে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ১৭ আগস্ট ‘অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার অনিন্দ্য ও তার দুই সহযোগী রিমান্ডে’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানানো হয়েছে, মোস্তাসেরুল আলম অনিন্দ্যকে ১৬ আগস্ট রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় পরিচালিত ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে প্রচুর অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে তার দুই সহযোগীও গ্রেফতার হন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনিন্দ্য রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শফিউল আলম লাট্টুর ছেলে। এছাড়াও, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই। প্রতিবেদনে অনিন্দ্যের সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির পোশাকের সাথে সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। ফলে ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি প্রকৃতপক্ষে অনিন্দ্য, পিনাকীর ছেলে নয়।
পরবর্তীতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, মানবজমিনের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পিনাকী ভট্টাচার্যের একমাত্র ছেলে রয়েছে, যার নাম রাসেভ আঞ্জুম শুভ। তবে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়নি যে, এই ছেলে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন বা এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে প্রবাসী সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ছোট ছেলে আটক হয়েছে-এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শফিউল আলম লাট্টুর ছেলে মোস্তাসেরুল আলম অনিন্দ্য, যিনি অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এই ঘটনা দেখায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তথ্য সবসময় সত্য নয়। ভিডিও, ছবি বা শিরোনাম দেখে কখনও তথ্যের সত্যতা যাচাই না করলে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে। সঠিক তথ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম ও সূত্রের ওপর ভিত্তি করে ফ্যাক্টচেক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।