আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি রোজা শরীর ও মনের জন্যও এক অনন্য উপকার বয়ে আনে। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, নিয়মিত রোজা রাখলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা কমে যায় এবং আয়ু বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়। ইসলামি শরিয়াহ মতে, রোজা তাকওয়া অর্জনের এক মহৎ মাধ্যম। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে রোজার উপকারিতা, ওজন ও মেদ কমানো: রোজার সময় শরীর শক্তির জন্য প্রথমে গ্লাইকোজেন ব্যবহার করে, পরে চর্বি ভাঙতে শুরু করে। এতে অতিরিক্ত মেদ কমে যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রোজা রাখলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
হৃদপিণ্ডের সুরক্ষা: রোজা কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। লিভার ও কিডনির বিশ্রাম: রোজার সময় হজমতন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো বিশ্রাম নেয়। শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়, লিভার ও কিডনি সুস্থ থাকে। কোষ পুনর্গঠন (Autophagy): রোজা ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ধ্বংস করে নতুন কোষ তৈরি করে। গবেষকরা বলছেন, এটি ক্যান্সার ও আলঝেইমার প্রতিরোধে সহায়ক। মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য: রোজা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ব্রেন হরমোন BDNF বৃদ্ধি করে, যা স্নায়ুবিক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা: বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত রোজা বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে পারে। ইসলামের আলোকে রোজার মর্যাদা, কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর- যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “আদম সন্তানদের সব আমল তাদের জন্য, তবে রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, ঢাকার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন,“ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা মাঝে মাঝে রোজা রাখলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ কার্যকর।” ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,
“রোজা শুধু শারীরিক নয়, বরং আত্মিক শুদ্ধির মাধ্যম। রোজার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং তাকওয়া অর্জন করে।” আধ্যাত্মিক লাভ, আল্লাহর বিশেষ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। গুনাহ মাফের সুযোগ তৈরি হয়। রোজাদারের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। রোজা শুধু দেহের সুস্থতা নয়, মনের প্রশান্তি এবং আত্মার পবিত্রতা এনে দেয়। আধুনিক চিকিৎসা ও ইসলামি শরিয়াহ উভয় দৃষ্টিতেই এটি মানুষের জীবনে দুনিয়া ও আখিরাতের দ্বিগুণ কল্যাণ বয়ে আনে।