লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ১২ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লন্ডনের সোয়াস ইউনিভার্সিটিতে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার সময় একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে এবং সাময়িকভাবে চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।সরকার জানায়, হামলার সময় মাহফুজ আলম গাড়িতে ছিলেন না। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুলিশ পুরো সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এর আগে নিউইয়র্কে সরকারি সফরকালে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার পর এবার লন্ডনে একই ধরণের ঘটনা ঘটল। নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের একটি অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম (এবং কিছু সূত্রের মতে বোতলও) নিক্ষেপ করে ও কাচের দরজা ভেঙে ফেলে। পরে মিশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে, যার মধ্যে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসও ছিল, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অনুরোধ জানায়। সরকারের মতে, বাংলাদেশের জনগণ ও দুই দেশের কর্তৃপক্ষ যেখানে সভ্যতা ও মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এ ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তরা বর্বরতা ও সহিংসতার পথে হাঁটছে। গণতন্ত্রে এমন আচরণের কোনো স্থান নেই, যেখানে যুক্তি ও সংলাপের বদলে আক্রমণ ও সন্ত্রাসকে বেছে নেওয়া হয়। বিবৃতিতে আবারও স্পষ্ট করা হয়, নিউইয়র্কের ঘটনার পর যেমন বলা হয়েছিল, সহিংসতা কোনো প্রতিবাদ নয়, ভয় দেখানো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়-এই অবস্থান লন্ডনের ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সরকার আগের মতোই পুনর্ব্যক্ত করছে যে, বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি, তবে তা অবশ্যই দায়িত্বশীলতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে হতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কনস্যুলার গাড়িকে লক্ষ্য করে হামলা ও চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ নয়, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেরও লঙ্ঘন। সরকার মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে সমন্বয়ের আহ্বান জানায়। সরকার এ ধরনের উসকানি বা সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, শিশুসুলভ আচরণ পরিহার করুন। যদি আপনারা সত্যিই নিজের মতাদর্শে বিশ্বাসী হন, তা শান্তিপূর্ণ, আইনসম্মত ও মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশ করুন। ডিম নিক্ষেপ, ভাঙচুর বা ভয়ভীতি প্রদর্শন কারো সমর্থন আদায় করতে পারে না; বরং এতে প্রমাণিত হয় আপনাদের কাছে আর কোনো শক্ত যুক্তি অবশিষ্ট নেই।
বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আয়োজক এবং প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়-সভ্য আলোচনার পক্ষে দৃঢ় থাকুন। তর্ক-বিতর্ক ও মতভেদের জায়গা থাকলেও তা অবশ্যই এমন হতে হবে, যা বক্তা, শ্রোতা এবং বৈধ প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আন্দোলনের শক্তি নির্ভর করে শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধের ওপর, চিৎকার বা সহিংসতার মাত্রার ওপর নয়। সরকার তিনটি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে-
১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে আহ্বান করা হয়েছে, তারা যেন ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে, সব ভিডিও প্রমাণ পর্যালোচনা করে ভাঙচুর ও হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনে।
২. রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠনগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তারা যেন দলীয় অবস্থান নির্বিশেষে প্রকাশ্যে ও স্পষ্টভাবে সহিংসতা ও ভয় দেখানোর ঘটনাকে নিন্দা জানায়।
৩. সরকার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, পাশাপাশি কর্মকর্তাদের, শিক্ষার্থীদের ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে মতপ্রকাশ ও সমাবেশ করার সমান অধিকারকে সমর্থন করে।
শেষে সরকার বলেছে, গণতন্ত্রে আবেগ প্রয়োজন হলেও আত্মনিয়ন্ত্রণও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে এমন এক গণতন্ত্রে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে, যেখানে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আবেগ ও সংযম দুই-ই অপরিহার্য।